ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ)

  ১৬ জুন, ২০২১

অনাহারে দিনাতিপাত

মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই যাত্রাশিল্পী মুক্তির

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

ভূমি ও গৃহহীন মুক্তি রানী দাস একটি নাম, একটি অধ্যায়। ১৯৫৬ সালে জন্মনেয়া ৬৫ বছর বয়স ছুঁই ছুঁই ওই নারীর স্বামী রতন চন্দ্র দাস। ২৮ বছর ধরে তিনি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের বুলবুল সিনেমা হল এলাকায় বসবাস করেন। পেশায় ছিলেন একজন যাত্রাশিল্পী। বর্তমানে বিলুপ্তির পথে বাঙালির এককালের বিনোদনের প্রধান অনুষঙ্গ যাত্রাপালা।

বছরের পর বছর বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা প্রদর্শনী বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পের সাথে জড়িত শিল্পী ও কলাকুশলীরা। মুক্তি রানীর মতো শিল্পকে ভালোবেসে এক সময় যারা যাত্রা অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন- এখন তারা এ শিল্পের সংকটে চরম বেকায়দায় পড়েছেন। প্রদর্শনী বন্ধ থাকায় অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে শিল্পীদের। অন্য কোন কাজ না জানার কারণে পেশাও বদলাতে পারছেন না তারা।

ব্যক্তিগত খোঁজখবর জানতে চাইতে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন মুক্তি রানী। অশ্রুসিক্ত চোখে আক্ষেপ করে বলেন, ‘যাত্রাশিল্পীদের খোঁজ কেউ রাখে না। বয়স বেড়ে যাওয়ায় শরীরে নানা অসুখ বাসা বেঁধেছে। এসব রোগ নিরাময়ে ওষুধ খাওয়ার সামর্থ্যও নেই। শরীরে শক্তি না থাকায় কোন কাজ করতে পারি না। জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি, তবুও কোন ভাতার কার্ড পাইনি। তবে গত বছর উপজেলা থেকে মাত্র ৫’শ টাকা পেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মহামারী করোনার লকডাউনের মধ্যেও খবর রাখেনি কেউ। আর কত গরিব হলে প্রধানমন্ত্রীর উপহার সরকারি ঘর এবং ভাতার কার্ড পাবো।’

জানা যায়, মুক্তি রানীর জন্ম নাটোর জেলা সদরের লালবাজার এলাকায়। পাকিস্তান আমলে তার বিয়ে হয় একই জেলা সদরের বাসুদেবপুর এলাকার রতন চন্দ্রের সাথে। কয়েক বছর ভালই চলছিল তাদের সংসার। এরই মধ্যে ঘর আলোকিত করে আসে নতুন অতিথি। স্বামীর সাথে বুনিবনা না হওয়ায় ১৯৬৯ সালে ৭ মাস বয়সের সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি ফিরে আসেন মুক্তি। দুস্থ পরিবারের হাল ধরতে নাম লেখান যাত্রাদলে। এরই পরিক্রমায় চলে আসেন মহাদেবপুর উপজেলায়। অভিনয় করেন যাত্রাদলে, ছিলেন ভাল মেকআপ আর্টিস্ট (রূপসজ্জাশিল্পী)। কাজ করেছেন অসংখ্য যাত্রাদলে। বর্তমানে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও শো-রুম পরিষ্কার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ছেলে বসবাস করেন নাটোরে। কিন্তু তার মার কোনই খোঁজ নেয় না।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদরের বুলবুল সিনেমা হল এলাকার বিশ্বাস স্কয়ার মার্কেটের পেছনের একটি যাত্রাদলের পরিত্যক্ত ভাঙাচোরা টিনের ঘরে তার বসবাস। বেড়াগুলোতেও অসংখ্য ফুটো। কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে তা। ভেতরের অবস্থা আরো নাজুক। বৃষ্টির পানি পড়ায় স্যাঁতসেঁতে। রাতে বৃষ্টি হলে নির্ঘুম রাত কাটে। ঘরের ভেতর প্রবেশ করলে সহজেই অনুমান করা যায় তার অসহায়ত্ব।

বুলবুল সিনেমা হল এলাকার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ওই নারীর দুর্দশার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মুক্তি রানী দাস আমার প্রতিবেশী। তাকে পুনর্বাসন করার জোর দাবি জানাচ্ছি। ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার সরকারি ঘর ও শিল্পীভাতা দিলে তিনি উপকৃত হবেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মিজানুর রহমান মিলন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পিডিএসও/ইউসুফ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভূমি ও গৃহহীন,মুক্তি রানী দাস,রতন চন্দ্র,যাত্রাশিল্পী,অসহায়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close