মুকুল মাসুদ, গাইবান্ধা

  ০৭ মে, ২০২১

দুর্ভোগে চরাঞ্চলবাসী

নাব্যতা সংকটে গাইবান্ধার নদ-নদীগুলো

নাব্যতা সংকটে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ সব কয়েকটি নদ-নদীতে পানি না থাকায় মরুভুমির আকার ধারণ করছে নদীগুলো। ওইসব নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলসহ নদী পথে যাতায়াতকারীরা পায়ে হেঁটেই পারাপার হচ্ছে নদী।

পর্যাপ্ত পানি না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে আন্তঃজেলা ও অভ্যন্তরীন নৌ-রুটের অধিকাংশ নৌ-রুট। এতে দূর্ভোগে পড়েছে নদীপথে যাতায়াতকারী মানুষজন। ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা ফেরাতে বিগত দু’বছর থেকে খনন কাজ করা হলেও অপরিকল্পত খননের কারণে মিলছে না কোন সুফল।

থৈ-থৈ পানিতে যে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, করতোয়া নদী এলাকার মানুষের কাছে ভাঙন আর বন্যায় ভাসিয়ে দেয়ার আতঙ্ক। এখন প্রমত্তা সেইসব নদ-নদীর বুকে কেবল দিগন্ত জোড়া ধু-ধূ বালুচর। পানি না থাকায় জেলার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, করতোয়াসহ সবগুলো নদ-নদী এখন সরু খালের রূপ নিয়েছে। নাব্যতা সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন জেলার সাথে বাণিজ্যিকভাবে নৌ চলাচলের অধিকাংশ ঘাট। নৌকার পরিবর্তে পায়ে হেঁটে, ট্রাক্টর ও ঘোড়ার গাড়িতে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নদী পাড় হচ্ছে মানুষজন।

জেলার ১৬৫ চরের মানুষ উৎপাদিত কৃষিপণ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য পূর্ব-পশ্চিম নদী পাড়ের ৬০টি হাট-বাজারের সাথে সম্পৃক্ত। আর পড়ালেখার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে তিন-চার হাজার ছেলে-মেয়েকেও আসতে হয় মেইন ল্যান্ডের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

বর্ষা মৌসুমে নৌকায় যাতায়াত সহজ হলেও নভেম্বর থেকে নদীতে পানি না থাকায় বালুর চর পায়ে হেঁটে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার চলাচল করতে হচ্ছে তাদের। আর সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের নিয়ে।

সরকারি নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ অঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, করতোয়াসহ ১০টি নদ-নদী অস্তিত্ব সংকটের কবলে পড়েছে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় যোগ হয়েছে মারাত্মক দুর্ভোগ।

ওই পথে চলাচলকারী সদর উপজেলার মোল্লার চর ইউনিয়নের চিথুলিয়া দিগর গ্রামের বাসিন্দা জলিল মিয়া বলেন, যে কয়টি নৌ-রুট চালু আছে সে পথেও স্বাভাবিকভাবে চালানো যাচ্ছে না নৌকা। ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা সংকটে গেল দু-বছর থেকে ড্রেজিং করলেও মিলছে না কোন সুফল। নদীর ড্রেজিং করা বালু নদীতে ফেলাসহ অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের ফলে সরকারি টাকা পানিতে ফেলা হচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআইডব্লিউটিএ’র বালাসী নৌঘাট ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. মাজু মিয়া বলেন, নাব্যতা সংকটে নদীতে নৌকা চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। অনেক রুট বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এর ফলে ওইসব নৌ-রুটের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

ড্রেজিং এর অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে পাওয়া যায়নি (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ) বিআইডব্লিউটিএ এর কাউকে। তবে জনগণের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে নদ-নদীগুলোকে বাচাঁতে কুড়িগ্রাম থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ডেল্টাপ্লানের পরিকল্পনায় ড্রেজিং এর প্রস্তুতি চলছে বলে জানান, গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান। তিনি আরও বলেন, ড্রেজিং হয়ে গেলে সারা বছর নৌ-চলাচল করতে পারবে।

নদ-নদীগুলো ড্রেজিং করে সারাবছর নৌরুট চালু রাখার পাশাপাশি দীর্ঘ প্রত্যাশিত ব্রহ্মপুত্র ট্যানেল বাস্তবায়ন করে এই অঞ্চলের উন্নয়নে সরকার দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করবে এমনটাই প্রত্যাশা এই অঞ্চলের মানুষের।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চরাঞ্চল,গাইবান্ধা,দুর্ভোগ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close