আব্দুর রহমান রাসেল, রংপুর

  ০৪ মে, ২০২১

চরাঞ্চলে উন্নত জাতের বাদাম চাষ, বম্পার ফলনের সম্ভাবনা

দেশের নদীগুলো উজান থেকে বয়ে নিয়ে আসা তলানী জমে পরিণত হচ্ছে চরে। এসব নদ-নদী প্রতি বছর বয়ে নিয়ে আসে প্রায় ১ বিলিয়ন টন তলানি। বন্যার সময় নদী ভাঙনের ফলে এ চর দিন দিন আরও বিস্তৃত হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে বিভিন্ন নদ-নদী পরিবর্তিত হচ্ছে বালুকাময় চরে। উত্তরাঞ্চলের চর সমুহ বালি প্রধান, তবে পলিও পড়ে কিছু কিছু অংশে। এ উর্বর পলিতে গতানুগতিকভাবে কিছু কিছু ফসল আবাদ হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক বেশ কিছু ফসলের উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবিত হয়েছে যা অস্থায়ী এবং স্থায়ী চরের জন্য উপযোগি বলে প্রতীয়মান।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার চর গনাই এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, এক সময় এই চরে কোন চাষ আবাদ হতো না। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে চিনাবাদাম-৯ বীজ নিয়ে চাষ আবাদ করে লাভের স্বপ্ন দেখছে। স্থানীয়রা জানান, আমারা আগে বাদাম আবাদ করে তেমন ফলন পাইনি। এখন অনেক ফলন হওয়ায় লাভোবান হয়েছি।

কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, আমরা আগে ঢাকা-১ চিনাবাদাম চাষ আবাদ করে তেমন ফলন পাইনি। কিন্তু এখন চিনাবাদাম-৯ চাষ আবাদ করে অনেক ফলন হওয়ায় অনেক লাভ হচ্ছে। এজন্য ধন্যবাদ জানাই কৃষি গবেষণাকে।

বিগত তিন বছর থেকে চর গনাই এলাকায় ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে আশার আলো জ্বালিয়েছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।

বেলাল হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমরা জানি বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। আগে আমাদের চর এলাকায় কোন কিছু আবাদ হতো না। কৃষি গবেষণা থেকে সরকারি চিনাবাদাম-৯ বীজ পেয়েছি, সেই বীজ দিয়ে বালু মাটিতে চাষ-আবাদ করেছি। এখন বাদামের আবাদ ভালো হইছে। এজন্য বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বারি রংপুর ড. মো. শামীম হোসেন মোল্লা বলেন, ফসল উৎপাদন কার্যক্রম এরই অংশ হিসেবে এ বছর চরে প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে উৎপাদিত হচ্ছে বারি চিনাবাদাম- ৯। যার উপর কৃষক মাঠ দিবস হয়েছে। চরে কৃষির উন্নয়নের মাধ্যমে এ সমস্ত কৃষকের জীবনমান উন্নয়ন করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।

করোনা অতিমারীর এ প্রতিকুল পরিবেশেও চরের কৃষক থেমে নেই, উৎসাহের সহিত চালিয়ে যাচ্ছে উচ্চফলনশীল। কাউনিয়া উপজেলার চর গনাই এলাকায় এ বছর প্রায় ৮৫ বিঘা জমিতে বারি ও ব্রি উদ্ভাবিত ১০ ধরনের উচ্চমূল্যের ফসল যেমন- পিয়াজ, রসুন, সরিষা, বাদাম, মিষ্টিকুমড়া, করলা, কাউন, চিনা, আলু,বোর ধান ইত্যাদির প্রায় ১৫ রকমের উচ্চফলনশীল জাতের পাইলট আকারে উপযোগীতা যাচাই করা হচ্ছে।

এছাড়াও চর এলাকায় ফসল ধারা উন্নয়নের লক্ষ্যে ধানবীহিন উন্নত ফসলধারা যেমন ‘আলু, পিঁয়াজ তারপর পিঁয়াজের সাথে রিলে পদ্ধতিতে বাদাম এবং আরেকটি ধানভিত্তিক উন্নত ফসলধারা ‘আলু, বাদাম, রোপা আমন ধান’ এ দুটি ফসলধারা উন্নয়নের উপর গবেষণা চলছে।

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বারি, রংপুর, ড. মো. আল-আমিন হোসেন তালুকদার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বাংলাদেশের চর এলাকায় গ্রামীণ জনবসতিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন” প্রকল্প। ইউ এস এ আই ডি (USAID) এর অর্থায়নে এবং বারি ও ইরি বাংলাদেশ (IRRI, Bangladesh) এর যৌথ সহযোগিতায় চিকচিকে রুপালি বালি ও পলিময় চরে।

নিরস মাটিতে উচ্চ মুল্যের ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি উচ্চ ফলন, কম উৎপাদন খরচ ও অধিক আয়ের মাধ্যমে চর কৃষকের জীবনমান উন্নয়নের প্রয়াশ চলছে। তবে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দিন দিন আবাদি জমি কমে যাচ্ছে।

প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষ মানুষ হচ্ছে বাস্তুহারা। চর কৃষকের জীবনমান তাই অতি নিম্ন। সেই সাথে অসময়ে হঠাৎ মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি-বন্যায় ভাঙনের ফলেও কমছে আবাদী জমি। আবাদি জমি ও ঘরবাড়ী বিলিন হয়ে যাচ্ছে নদী গর্ভে।

উল্লেখ্য যে, দেশের প্রায় ১ মিলিয়ন হেক্টর চর এলাকার মধ্যে রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামেই রয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার হেক্টর চর।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চরাঞ্চল,উন্নত জাতের,বাদাম চাষ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close