reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৫ এপ্রিল, ২০২১

নারী দ্বারা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার, স্ত্রীসহ লাইভে এসে কাঁদলেন খোরশেদ

করোনার সম্মুখযোদ্ধা নারায়ণগঞ্জের আলোচিত কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। সাদিয়া আক্তার ওরফে শিউলি ওরফে খুকু মনি ওরফে নিশো নামে এক নারীর ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন তিনি। ওই নারী ইতোমধ্যে খোরশেদকে বিয়ে করতে তাকে অপহরণ করার পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যার হুমকি দিয়েছেন। কাউন্সিলরও নিজের এবং তার পরিবারের জীবন নিয়ে আশঙ্কায় আছেন। এই অবস্থায় নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে বিশ্বাস-সহায়তা ও রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা দাবি করেছেন তিনি। এ সময় পাশেই ছিলেন তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা।

শনিবার সামাজিকমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে এসব কথা জানিয়ে নিজের ও পরিবারের জন্য নিরাপত্তা দাবি করেন কাউন্সিলর খোরশেদ। লাইভে তিনি জানান, সাইদা আক্তারের এখন পর্যন্ত তিনটি বিয়ে হয়েছে। তার দুই ছেলে মেয়ে, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, অন্যজন পড়ে দশম শ্রেণিতে। ওই নারী নিজেকে বিসিএস ক্যাডার পরিচয় দেয়। স্ক্রিনশট দিয়ে মানুষকে অত্যাচার করেন। তিনি ভয়ংকর চরিত্রের অধিকারী একজন ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে প্রশাসন ও উচ্চ মহলের বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিদের চলাফেরা আছে বলেও জানান খোরশেদ।

ঘটনার বিস্তারিত জানাতে গিয়ে খোরশেদ কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি করোনার শুরু থেকেই করোনায় আক্রান্তদের সেবা প্রদান করি ও সম্মুখে থেকে লড়াই করি, দাফন সৎকার করি। একপর্যায়ে গত মে মাসে আমি ও আমার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হই। এ সময় অক্সিজেনের অভাবে আমার স্ত্রীকে আইসিইউতে ভর্তি করতে হয়। তখনই মনে হয় অক্সিজেনের জন্য করোনায় আক্রান্ত যারা সমস্যায় পড়বেন তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেব বিনামূল্যে। এ সময় গণমাধ্যমের একটি নিউজের নিচে এ নারী কমেন্ট করেন তিনি অক্সিজেন দিতে চান এবং আমার সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেন। তখন থেকেই তিনি আমার সাথে ফেসবুকে অ্যাড হন এবং কথা বলা শুরু করেন।

একপর্যায়ে আমি বুঝতে পারি তার মতলব ভিন্ন এবং আমি তাকে তখন দূরে সরাতে চেষ্টা করি এবং তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। তার ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেকেও আমি ঘটনা জানাই, তখন সে আমাকে বলে তার মা হয়তো দুষ্টুমি করছে এরকম কিছু সম্ভব নয়। তাতেও কাজ হবে না বুঝে আমি নভেম্বর-ডিসেম্বরে তার ভগ্নিপতিকে জানাই। এতে তিনি আরও ক্ষুব্ধ হন এবং আমার পেছনে উঠেপড়ে লাগেন।

খোরশেদ আরও বলেন, তারপর আমার স্ত্রীকেও বুঝিয়ে বলি, আমার স্ত্রীও বলে তিনি আমার সাথে দুষ্টুমি করছে হয়তো। এরপর একবার তিনি আমাকে বিয়ে করবে ঠিক বলে গাড়িতে করে কাজী নিয়ে আমার বাড়িতে আসেন আমাকে উঠিয়ে নেওয়ার জন্য। পরে আমার স্ত্রী ও লোকজন তাকে আটকায়। তিনি আমাদের জীবন বিষিয়ে তুলেছেন। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসহ সবার কাছে গেছে। তবে আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ যে সবাই তার কুটকৌশল বুঝতে পেরে তাকে অবজ্ঞা করেছেন। সম্মানকে ভয় পাই বলেই এত দিন মুখ খুলিনি। আমি ধৈর্য ধরেছি, কারণ আল্লাহ হয়তো একটি ফয়সালা করবেন। তবে দু’দিন আগে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় দুটি পত্রিকায় আমাকে জড়িয়ে এ সংক্রান্ত নিউজ হওয়ায় আমি নিজেই বিষয়টি সবার কাছে বলতে এসেছি। আমার পাশে থাকার জন্য আমি সাংবাদিক, আমার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও প্রতিপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ।

কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ আরও বলেন, ২১ জানুয়ারির পর থেকে হোয়াটস অ্যাপে, ম্যাসেঞ্জারে, টেলিফোনে আমাদের হুমকি দিচ্ছেন এবং হত্যার হুমকি জানাচ্ছেন ওই নারী। আমার পরিবারের সবাইকে মারাত্মক মানসিক অত্যাচার করছেন। সর্বশেষ আমার স্ত্রী-সন্তানকে তুলে নিয়ে হত্যা করবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। আমি এসব ঘটনায় শুরু থেকেই সরকারি সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি। বিভিন্ন ঘটনা ঘটার পর পরই তাদের অবহিত করা হয়।

খোরশেদ বলেন, একপর্যায়ে তিনি ছড়িয়ে দেন, ধানমন্ডির এক বুটিক ব্যবসায়ী নারীকে আমি বিয়ে করেছি এবং দুই বউ নিয়ে গ্যাড়াকলে আছি। এ ধরনের কোনো ঘটনা সত্য নয় এবং স্থানীয় দুটি পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়, যা দুঃখজনক। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন থেকে ডন চেম্বারের সামনে একটি জায়গা বরাদ্দ পেলেও রাজউকের মামলার কারণে তার জায়গা হাতছাড়া হয়। পরে তিনি বলে আমার কারণে নাকি হাতছাড়া হয়েছে। যার সাথে আমি থাকিনি, কিছুই করিনি তাকে কেন ফেসবুকে কথা বলে বিয়ে করতে হবে?

এ সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে খোরশেদ বলেন, আমার বাড়ি একটি মরা বাড়ি হয়ে গেছে। একে তো লাশ দাফন করি একের পর এক তার ওপর আবার আমার বাচ্চাদের থেকে এসব কারণে লুকিয়ে থাকতে হয়। তাদের জীবনের ভয়ে আছি আমি। ছেলে-মেয়ে আমার চিন্তায়, পারিবারিক অশান্তিতে অসুস্থ হয়ে গেছে। এটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এই ঘটনার কারণ কি? আমি এসব থেকে মুক্তি চাই আল্লাহর সাহায্যের মাধ্যমে। বিভিন্ন মানুষকে ব্যবহার করে তিনি আমাদের জ্বালাতন করতেন। এত দিন কষ্ট সহ্য করেছি, আর পারছি না। অনেকে লজ্জায় আমার কাছে জিজ্ঞাসা করতে পারেন না। শুভাকাঙ্খী হিসেবে আপনাদের কাছে এ ঘটনার বিচার চাই। সাংবাদিক ভাইয়েরা লেখনি ও প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে আমাকে এ অবস্থা থেকে বাঁচান। আমি এ নির্যাতন থেকে উদ্ধার হতে মুক্তি চাই। আমি আমার পরিবারের কাছেও ক্ষমা চাই এসব ঘটনায়।

তিনি বলেন, কারও ইজ্জত তৈরি করতে অনেক সময় লাগে, আমিও অনেক সময় নিয়ে ইজ্জত অর্জন করেছি। এখন তিনি সব নষ্ট করে দিচ্ছেন পরিকল্পনা করে। আমার জামা-কাপড় দেখলে বুঝবেন আপনারা আমি কখনো বিলাসিতা করিনি। আমি বাসা-বাড়িতে সময় না দিয়ে আপনাদের সেবায় দিনরাত পার করছি এবং নিজের একটি অবস্থান করছি। কেন আমার সুনাম নষ্ট করে আমার ক্ষতি করতে চাইছে এর কারণ কি উদঘাটন করে মুক্তি চাই।

এ সময় লাইভে খোরশেদের স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা বলেন, হঠাৎ এক দিন তিনি বাড়ির নিচে এসে উপস্থিত কাজী নিয়ে। পরে আমরা তাকে ধরি। প্রথম দিন আসার পর আমাকে বলেন আমার বড় ভাই খোরশেদ। দুই ঘণ্টা পর আমাকে বলেন এক দিন পরে আপনাকে বলবো সব। পরের দিন তিনি আমাকে বলেন, আমি খোরশেদকে ভালোবাসি আমি তাকে চাই। আপনি অনুমতি দেন। আমি সংসার বুঝি না, সংসার আপনার সাথে করবে আর আমার সাথে শুধু ফোনে কথা বলবে আর আমাকে সময় দেবে। তার এ ধরনের কথায় আমার মনে হয় তিনি সুস্থ নয়।

লাইভের শেষ পর্যায়ে খোরশেদ বলেন, যেহেতু সে সরাসরি বিভিন্ন মানুষের কাছে এবং মেসেজে টেলিফোনে আমাদের এমন হুমকি দিচ্ছে, এখন আমি চরমভাবে ভীত। যেহেতু তার বড় বড় মানুষের সঙ্গে কানেকশন আছে, গুন্ডাপান্ডাদের সঙ্গে কানেক্ট আছে; বিভিন্ন তেল চোর সিন্ডিকেটের সঙ্গে কানেকশন আছে, যেকোনো সময় আমার পরিবারের লোকজন এবং আমি আক্রান্ত হতে পারি। হত্যার শিকার হতে পারি। আমি জনতার আদালতের কাছে বিষয়টা তুলে ধরলাম। আপনারা বিষয়টা দেখবেন। এ সময় নারায়ণগঞ্জবাসীকে তার প্রতি বিশ্বাস রাখতে অনুরোধ করেন খোরশেদ।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ,ব্ল্যাকমেইলিং,নারায়ণগঞ্জ,কাউন্সিলর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close