হাসানুজ্জামান তুহিন (শাহজাদপুর) সিরাজগঞ্জ

  ১০ এপ্রিল, ২০২১

স্কুল না করেই ৮ বছর বেতন তুলছেন শিক্ষক জাহাঙ্গীর

দীর্ঘ ৮ বছর স্কুল না করেই বেতন তোলার অভিযোগ ওঠেছে কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ এর স্কুল শাখার সহকারি শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের চর কৈজুরি গ্রামে অবস্থিত কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ । ওই স্কুলের বর্তমান অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং কৈজুরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের আপন ছোট ভাই। এরই সুবাদে চাকরিতে সুযোগ নিয়ে তিনি ঢাকার মিরপুর-১ এর শাহআলী বাগ কলওয়ালপাড়ায় অবস্থান করে গার্মেন্টস সুতায় রঙ করার ব্যবসা করেন। তারপরেও তিনি ওই স্কুল শাখার সহকারী শিক্ষক পদে থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন।

আরও পড়ুন : ধর্মান্তরিত করে ছাত্রীকে নিয়ে পালিয়েছে প্রধান শিক্ষক

কাগজে-কলমে হাজিরা ঠিক থাকলেও তিনি কোনদিন স্কুলে উপস্থিত থাকেন না। ফলে কৈজুরি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ হারুনার রশিদ সম্প্রতি এলাকাবাসীর পক্ষে ও জনস্বার্থে এ অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোঃ শামসুজ্জোহা সাংবাদিকদের জানান, আনীত অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত শেষ হয়েছে। তবে আরো তদন্তের প্রয়োজন। তাই ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবেন।

তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের বেশকিছু সত্যতা প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী মোঃ হারুনার রশিদ জানান, জাহাঙ্গীর হোসেন জীবনে কখনই এ বিদ্যালয়ে গিয়ে ছাত্রদের ক্লাস নেননি। তিনি ঢাকার মিরপুর-১ এর শাহআলী বাগ কলওয়ালপাড়ায় গার্মেন্টস সুতার রঙ করার কারখানার ব্যবসা করেন। এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ তার বড় ভাই সভাপতি অপর ভাই সাইফুল। এ ছাড়া তার আরো দুই ভাই এ প্রতিষ্ঠানের সহকারি শিক্ষক। ফলে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকায় অবস্থান করেও জালিয়াতির মাধ্যমে হাজিরা খাতায় নিজেকে উপস্থিত দেখিয়ে এ প্রতিষ্ঠান থেকে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে নিয়মিত বেতন ভাতা তুলছেন।

স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, কোন প্রভাব না খাটিয়ে এই শিক্ষক যেন সহজেই পার পেয়ে না যায়। এজন্য ঘটনাটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশুদৃষ্টি কামনা করেন। সুষ্ঠু তদন্ত না হলে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে বলে জানান।

ঘটনা সম্পর্কে স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, ওই সহকারি শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন ৮ বছর আগে স্কুলের সৃষ্টপদে যোগ দিলেও ২০১৮ সালে তিনি এমপিওভুক্ত হন। তবে ৮ বছর বেতনভাতা উঠানোর বিষয়টি সত্য নয়।

অভিযুক্ত শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন এই প্রতিবেদককে জানান, সৃষ্টপদে সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসাবে ৮ বছর আগে যোগদান করলেও আমার কোন বেতনভাতা বা অন্যকোন সুযোগ-সুবিধা এমপিওভুক্তির আগ পর্যন্ত ছিল না। এমপিও ভুক্তির পর থেকে ৩ বছর হলো আমি বেতনভাতাসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছি। করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার কারণে স্কুল প্রধানদের জানিয়েই আমি বাড়তি আয়ের আশায় ঢাকায় একটি ছোট খাটো ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়েছি। যা স্কুল খুললে স্কুলের পাশাপাশি কৈজুরীতে বসেই পরিচালনা করা সম্ভব।

পিডিএসও/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিরাজগঞ্জ,শাহজাদপুর,কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয়,৮ বছর,বেতনভাতা,দুর্নীতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close