সালাহ্উদ্দিন শুভ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)
গঞ্জের বাজারেই লেবুর হালি ৬০ টাকা!
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি লেবু ফলন হয় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায়। শ্রীমঙ্গলে রয়েছে শতাধিক লেবুর আড়ৎ। এলাকায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার লেবু পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়। করোনার ভাইরাসের কারণে বাজারে লেবুর চাহিদা এখন বেশি, কিন্তু এই সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গত কয়েকদিন বাজারে লেবুর দাম আকাশছোঁয়া। হালি বিক্রি হচ্ছে ৫৫/৬০ টাকা দরে। পাইকারি হালি ৪০ টাকা থাকলেও খুচরা বাজারে তা ৫৫/৬০ টাকা ছুঁয়েছে।
কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের কাচাঁবাজারের কয়েকটি আড়তের দোকান ঘুরে এ চিত্র পাওয়া যায়। আড়তদাররা বলেন, এ বছর লেবুর সরবরাহ কম থাকায় বাজারে করোনা ভাইরাসের কারণে লেবুর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়েছে। অথচ, এ লেবুর হালি কিছুদিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ১৫/২০ টাকায়।
জানা যায়, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল দেশের অন্যতম একমাত্র লেবুর বাজার। এখানে রয়েছে শতাধিক লেবুর আড়ৎ। এখান থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লেবু বাজারজাত হয়। লেবু চাষীরা তাদের উৎপাদিত লেবু জিপে করে আড়তে নিয়ে আসেন। সেগুলো তারা বিক্রি করেন গাড়ি ধরে। আড়ৎদাররাও বাগানের লেবু কেনেন জিপ গাড়িচুক্তি । প্রতিটি জিপ গাড়িতে ১৫০০/১৬০০ লেবু থাকে। গাড়ি প্রতি বিক্রি হয় ১০ হাজার অথবা ১১ হাজার টাকা ধরে।
বাজারে লেবু কিনতে আশা পলি আক্তার জানান, ‘আমার বড় বোনের ডায়বেটিকস। তাছাড়া উনার কিছু দিন আগে পিত্তথলিতে পাথর হয়েছিলো। আমরা অপারেশন করিয়েছি। এখন উনার জন্য শমসেরনগর বাজারে এলাম লেবু নেওয়ার জন্য। কিন্তু যে লেবু নিয়েছিলাম ৫দিন আগে ১৫ টাকা করে, এখন সেই লেবু কিনতে বাজারে এসে দেখি ৬০ টাকা। অবাক লাগে, কী করে দাম হঠাৎ এমন করে বাড়লো। কিন্তু আমার প্রয়োজন থাকায় এত দাম দিয়েও লেবু নিতে বাধ্য হচ্ছি।
শ্রীমঙ্গলের মা বাণিজ্যালয়ের আড়ৎদার রাজিব আহমদ জানান, লেবু তিন ধরনের রয়েছে। বড়, ছোট ও মাঝারি। বেশ কিছুদিন ধরেই লেবুর বাজার চড়া। তবে আজকের বাজারে দামটা বেশি। এবার লেবুর ফলন খুব কম হয়েছে। সরবরাহও কম। তাই দাম চড়া। এখানে বিক্রেতাদের কিছুই করার নেই। চাহিদা আর সরবরাহের কথা বিবেচনায় দামের এই চড়া ভাব আরও বেশ কিছুদিন থাকবে।’
শ্রীমঙ্গলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক আড়ৎদার বলেন, ‘করোনার কারণে বাজারে লেবুর চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় লেবু উৎপাদন কমেছে। এ কারণে লেবুর বাজার একটু চড়াই।’
সরেজমিন কমলগঞ্জের ভানুগাছ বাজার, আদমপুর বাজার ও শমসেরনগর বাজার ও শ্রীমঙ্গলের পুরান ও নতুন বাজার গিয়ে দেখা যায়, দেশি লেবু প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকায়। এক ডজন কিনলে ২০০ টাকা রাখা হলেও হালি বিক্রি হচ্ছে ঠিক ৫৫/৬০ টাকায়। তবে, কাগজি লেবু তুলনামূলক কিছুটা কম। এর হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। তবে ছোট লেবুর দাম কিছুটা কম।
ভানুগাছ বাজারের লেবু বিক্রেতা সালাহ মিয়া বলেন, ‘আমরা পাইকারি বাজার থেকে হালি ৪০/৪৫ টাকায় আনি। অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে তাই ৫৫/৬০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রিও কমেছে সমান হারে। এদিকে করোনা ভাইরাসের জন্য লেবুর শরবত উপকারী। তাই লেবুর চাহিদা প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বাজারে লেবুর দামও বেড়েছে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলাউদ্দীন বলেন, কমলগঞ্জে ১৪০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়েছে।
পিডিএসও/এমএইউ