মো. লাল মিয়া, তারাগঞ্জ (রংপুর)

  ২৬ জানুয়ারি, ২০২১

তারাগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে আনন্দে ভাসছে পরিবারগুলো

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে আনন্দে ভাসছে সুবিধাভোগিরা। অসচ্ছল দরিদ্র ও গৃহহীন পরিবারগুলোর বাসস্থান নিশ্চিত করতে দৃষ্টিনন্দন বাড়িগুলো দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। হতদরিদ্র পরিবারগুলো পেয়েছে তাদের স্বপ্নের ঠিকানা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত পরিবারগুলো উল্লাসিত ও আনন্দিত হয়ে পড়েছে।

যাদের বাবা-মা ও সন্তানদের নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাই ছিলো ঝুঁপড়ি ঘর তারা এখন পাকা ঘরে রাত্রিযাপন করছে। এ যেন তাদের স্বপ্নের মত মনে হয়। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে কোটি কোটি দোয়া করেন শেখ হাসিনার জন্য।

নির্বাচিত পরিবারগুলো কেউ থাকতেন অন্যের জমিতে, কেউবা খাসজমিতে, কেউবা খোলা আকাশের নিচে, কেউবা বাসষ্ট্যান্ডের রাস্তায়। এরকম মানুষদেরকেই করা হয়েছে এসব ঘরের মালিক। নতুন বছরের প্রথম মাসেই এ উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর ১৩০টি ঘর উপহার পেয়েছে গৃহহীনরা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সরকারি খাস জমিতে এসব ঘর তৈরী করা হয়েছে। এর প্রতিটি ঘরে দুটি শয়নকক্ষ ছাড়াও রয়েছে একটি করে বারান্দা, বাথরুম ও রান্নাঘর। এর প্রতিটি ঘরে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার করে টাকা। এছাড়াও প্রতি ঘরের পরিবহন বাবদ অতিরিক্ত খরচ ধরা হয়েছে ৪০০০ করে টাকা।

২৩ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “ জমি নেই, ঘর নেই” এসব দারিদ্র পরিবারগুলোর হাতে ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন। সাথে বাড়ির মালিকদের জমির দলিল, নামজারি, জমির মালিকানা কবুলিয়ত নামা। প্রতিটি ঘরে পানির জন্য অগভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। দেয়া হয়েছে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ।

উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের ফরিদাবাদ এলাকায় ২০টি ঘর। কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর আদর্শ গ্রাম এলাকায় ৫১ টি। ইকরচালী সুকান দীঘি এলাকায় ২৬ টি। হাঁড়িয়ারকুটি উজিয়াল এলাকায় ৩৩ টি। সব মিলিয়ে মোট ১৩০টি ঘর দেয়া হয়েছে নির্বাচিত সুবিধাভোগিদের।

ঘর নির্মাণ কাজের শুরু থেকে কড়া নজর রাখেন তারাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। ভূমিহীন এবং গৃহহীন মানুষেরা যাতে নির্দিষ্ট সময় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পান সেজন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকল্প অফিস ও স্থানীয় সরকারের ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলীরা।

মঙ্গলবার সকালবেলা গিয়ে দেখা যায় সয়ার ইউনিয়নের প্রধানমন্ত্রীর ঘরের সুবিধাভোগি উত্তর সয়ার পশ্চিম পাড়া গ্রামের আশরাফননেছা হাসিমাখা মুখে রান্নাবান্নার কাজ করছে। কিছু দিন আগে যে অন্যের জমিতে ঝুঁপড়ি ঘরে রাত্রিযাপন করতো বিষন্ন মুখে সে এখন হাসিমুখে নিজ ঘরে মহাসুখে জীবনযাপন করছে। অন্যের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঝিয়ের কাজ করে কোনরকম জীবন বাঁচাতো সে। শীত-বর্ষায় কোনরকম বেঁচে থাকাই যেন কাম্য।

আশরাফননেছার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “মুই কোনদিন চিন্তা করির পাওং নাই যে মুই পাকার ঘরোত থাকিম। কোনদিন এরকম একটা ঘরের মালিক হইম। এখন আইতোত যখন মুই নিন যাওং তখন মোক স্বপ্নের মোতন নাগে। কি চকচকা ঘর। অঙ্গিন রংয়ের টিন দেছে। একটা ঘরোতে সউগে দেছে। মুই বুড়ি মানুষ আইত হইলে এখন আর মোক ঘরের বাইরোত বেড়ার না নাগে। শেখ হাসিনা হামাক পাকা ঘরোত থাকির কপাল করি দিচে আল্লাহ্ ওমাক হাজার বছর বাঁচে থুক। মুই যতদিন বাঁচি থাকিম ততদিন শেখের বেটির জন্যে দোয়া করিম”।

সয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আজম কিরণ বলেন, আমার ইউনিয়নের গরীব অসহায়দের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দিতে পারায় আমাকে সত্যিই খুব আনন্দ লাগছে। আমার এলাকার লোকেরা শান্তিতে থাকতে পারবে এটাই আমার কাছে সব থেকে বড় পাওয়া।

তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে সাথে নিয়ে চেষ্টা করেছি যাতে গৃহহীনরা নিদিষ্ট সময়ে তাদের স্বপ্নের ঘরে উঠতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ে সুবিধাভোগিদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর তুলে দিতে পারায় সম্পৃক্ত সকলকেই কৃতজ্ঞতা জানাই।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
তারাগঞ্জ,প্রধানমন্ত্রীর উপহার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close