মো. রফিকুল ইসলাম, শিবচর (মাদারীপুর)

  ২০ জানুয়ারি, ২০২১

৩৭ বছর ধরে পাপড় বিক্রির টাকায় চলে সংসার

গ্রামেগঞ্জে ছোট থেকে বড়দের একটি মুখরোচক খাবার হচ্ছে পাপড়। সাধারণত মেলার মাঠ, সিনেমা হলের সামনে, পূজা-পার্বনে, অস্থায়ী বাজার কিংবা ধর্মীয় মাহফিলস্থলে পাপড় বিক্রির ধুম পড়ে যায়।

দামে স্বস্তা এ খাবারটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হলেও মুখরোচক হওয়ায় এর চাহিদার কমতি নেই। আর এই পাপড় তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বহেরাতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের সরকারেরচর গ্রামের আবদুর রশিদ বেপারী (৫৬)।

এরশাদের আমল থেকে অর্থাৎ ১৯৮৩ সাল থেকে আজও পাপড় তৈরি করে তিনি চালান অভাবের সংসার। পাশাপাশি দুই ছেলেকে পড়াশোনার খরচ জোগাড়সহ স্ত্রীকে নিয়ে বেশ সুখেই আছেন তিনি।

মঙ্গলবার রাত ৮ টার দিকে শিবচর উপজেলার টিএনটি অফিসের সামনে পাপড় খেতে খেতে আলাপ হয় রশিদ বেপারীর সাথে। এসময় জানা যায় তার জীবনের গল্প।

ছোট বেলা বাবা মারা গেলে চলে যান ঢাকার জিঞ্জিরাতে। সেখানে কোন কাজকর্ম না পেয়ে অভাবের তাড়নায় ছুটতে হয়েছিলো এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায়। জিঞ্জিরা এলাকার এক লোকের কাছ থেকে পাপড় উৎপাদন শিখে ঘুড়াতে চেষ্টা করেন ভাগ্যর চাকা। তবে রাজধানীতে বাসা ভাড়া ও সংসারের খরচ বেশি হওয়ার দশ বছর আগে চলে আসেন নিজ গ্রামে।

নিজের জমি বলতে বসত ভিটার পাঁচ শতক ছাড়া কিছুই নেই। বয়স প্রায় ৫৬। স্ত্রী, এক মেয়ে ও দুই ছেলেসহ মোট ৫ জনের সংসার। তবে ইতোমধ্যই বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে জসিম উদ্দিন বর্তমানে উপজেলার বরহামগঞ্জ কলেজে ডিগ্রী (পাশ) কোর্সে অধ্যয়নরত, আর ছোট ছেলে জাকির হোসেন স্থানীয় একটি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। ছোট ছেলে পড়া-লেখার পাশাপাশি বাবার কাজে সাহায্য করেন বলেও জানান তিনি।

বাড়িতে বসে সারাদিন তেল, ময়দা, হলুদ, ডিম, কালোজিরা ও লবণসহ বিভিন্ন মশলা দ্বারা তৈরি কার হয় এই পাপড়।উৎপাদিত পাপড় প্রতিদিন বিকাল ৪ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত গরম তেলে ভেজে আর বিট লবনের স্বাদে শিবচর বাজারের টিএনটি অফিসের সামনে বিক্রি করেন তিনি।

তিনি জানান, সাধারণত বছরের ভাদ্র থেকে মাঘ বা ফাল্গুন এই ৬/৭ মাস পাপড়ের চাহিদা থাকে বেশি। বর্ষার সময় পাপড় তৈরি বেশ কষ্টকর। কারণ তখন বেশি বৃষ্টিপাত হয়। পাপড় তৈরির পর তা রোদে শুকাতে হয়।

এসময় পাশে বসা তার ছেলে জাকির হোসেনের কাছে তার পড়াশুনার খোঁজখবর জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে কলেজ বন্ধ। তাছাড়া আমরা গরীব মানুষ। বাবাকে আমি তার কাজে সাহায্য করছি। প্রতিদিন অনেক রাতে বাবা একা একা বাড়ি ফিরেন। তার সাথে থাকলে তিনি তার কাজে সাহায্য পান এতে আমার অনেক ভালো লাগে।

পাপড় কিনতে আসা সেলিম রেজা নামের এক যুবক বলেন, রশিদ কাকার পাপড় খুবই মজাদার। আমি প্রায়ই খাই। আবার মাঝে মাঝে আমার ছেলে-মেয়ের জন্য কিনে নিয়ে যাই।

পাপড় কেমন বিক্রি হয় জানতে চাইলে আবদুর রশীদ বেপারী বলেন, প্রতিদিন আড়াইশত থেকে তিনশত পাপড় বিক্রি করি। একটি পাপড় ৫ টাকা দরে বিক্রি করায় দৈনিক প্রায় ছয় থেকে সাতশত টাকা লাভ হয়। তবে ইদানিং তেল ও মসলার দাম বেশি হওয়ার উৎপাদন খরচও একটু বেশি পড়ে।

আবদুর রশিদ বেপারী আরো বলেন, জীবিকার তাগিদে আমি এরসাদের আমল থেকেই পাপড় তৈরির কাজ শুরু করি। বর্তমানে আমার উৎপাদিত পাপড় বাড়িতে বসে পাইকারী দরে অন্য এলাকার লোকদের কাছে বিক্রি করি। আর বিকেল থেকে আমি নিজে এখানে বসে বিত্রি করি। এছাড়াও এই কাজ করে ওদের দুইভাইকে কলেজে পড়াচ্ছি।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পাপড় বিক্রি,টাকা,সংসার
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close