আল-আমিন মিয়া,পলাশ (নরসিংদী)

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২১

পলাশে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নেয়ার মহোৎসব!

চারদিকে মানুষের বাড়িঘর। মাঠের পর মাঠে চাষ করা হচ্ছে ধান, গম, ধঞ্চে, ডাটা, সরিষা, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন শস্য। এরমধ্যেই কিছু দূর পরপর চোখে পড়ে ইটভাটা। আর এসব ইটভাটায় মাটি যাচ্ছে কৃষকের ফসলি জমি থেকে। এই চিত্র নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের।

সরেজমিন ওই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কোনো কোনো জমির মধ্যে যেন মাঝারি সাইজের পুকুর। এক একটি জমিতে ৩ থেকে ৪টি ভ্যাকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। কয়েক মিনিট পর পর ট্রাক্টর (ট্রলি) ভরে এসব মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ইটভাটাগুলোতে। ডাঙ্গার কাজৈর গ্রামের বসতভিটাগুলোর পাশে প্রায় ৪০০ বিঘা ফসলি জমি রয়েছে। এরইমধ্যে প্রায় ৮০ বিঘা জমির মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। জমির মধ্যখানে খনন করে মাটি কাটার ফলে পাশের জমিগুলোও ভেঙে যাচ্ছে। কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার যেন এক মহোৎসব চলছে ওই ইউনিয়নে।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, দিনে-দুপুরে কৃষকদের কৃষি জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে নিচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল। আর সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটাগুলোতে। প্রতিবাদ করলে মারধর ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে কৃষকদের। আবার অনেকেই এক প্রকার বাধ্য হয়ে ইটভাটায় মাটি বিক্রি করছে।

ডাঙ্গার কাজৈর গ্রামের বাসিন্দা আবদুর কুদ্দুস মিয়া বলেন, বেপরোয়াভাবে ট্রলি দিয়ে ইটভাটার মাটি আনা-নেয়ার ফলে গ্রামের সব রাস্তাই ভেঙে চলাচলের অনুপযোগ হয়ে গেছে। এছাড়া ধুলায় আশপাশের ঘরবাড়ি, সবজি বাগান, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কিছু বললেই ইটভাটার মালিকরা হুমকি দিয়ে যায়। তাদের কাছে সাধারণ কৃষকরা অনেকটা জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন।

ভ্যাকু চালকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, এখান থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রলি মাটি নিতে পারছেন। মাটি কাটার বিষয়ে তারা জানান, ইটভাটার মালিক এসব জমি কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন। মালিকদের কথায় তারা এখান থেকে মাটি কাটছেন।

কিন্তু আবদুল রহমান ও শমসের আলীসহ স্থানীয় কৃষকরা জানান, ফসলি জমির মাটি তারা বিক্রি করেননি। জোরপূর্বক মাটি কাটা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনও নীরব ভূমিকা পালন করায় মাটিখোররা বেপরোয়া হয়ে গেছে। তারা প্রভাশালী বলে কেউ তাদের বাঁধা দিতে সাহস পায় না। জনপ্রতিনিধিরা দেখেও না দেখার ভান করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু ডাঙ্গা ইউনিয়নেই ছোট-বড় ১৮ থেকে ২০টি ইটভাটা রয়েছে। যার অধিকাংশই ফসলি জমিতে। এসব ইটভাটাগুলোর অধিকাংশরেই পরিবেশ ও কৃষি অফিসের ছাড়পত্র নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান সাবের উল হাই প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অত্যাধিক ইটভাটায় এলাকার ফসলি জমি ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতির বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে অনেকবার অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা ইয়াসমিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পলাশ উপজেলা,ইটভাটা,ডাঙ্গা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close