​এস.এইচ.এম. তরিকুল, রাজশাহী ব্যুরো

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের বিরুদ্ধে হেনস্তার অভিযোগ

রাজশাহীর শ্রম আদালতে ২য় শ্রেণির ছাত্র জুবাইর!

কোনো অপরাধ না করা সত্ত্বেও শ্রম আইনের মামলায় আসামি করায় রাজশাহীর আদালতে হাজিরা দিয়েছেন দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যায়নরত আট বছরের শিশু জুবাইর আহমেদ। কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের খামখেয়ালিতেই ঘটেছে এমন ঘটনা। অভিযুক্ত এই শিশুর পিতার নাম জুনাব আলী। বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার পূর্বপুঠিয়াপাড়া গ্রামে।

আর এ খবরটি রোববার একটি বেসরকারি চ্যানেলে প্রচারিত হওয়ার কারণে ওই অধিদফতরের বিরুদ্ধে ওঠা সমালোচনার ঝড় দেশ ছাড়িয়েছে। এ ঘটনায় রাজশাহী এখন ‘টক অব সিটি’তে পরিণত হয়েছে। কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতোমধ্যেই ঝড় উঠেছে।

জানা গেছে, রাজশাহীর পবা উপজেলার পৌর মার্কেটের একটি জুতার দোকানে সাইনবোর্ডে প্রোপাইটারের পাশে শখ করেই ছেলের নাম লিখেছিলেন জুবাইরের বাবা। এরপর গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দোকান বন্ধ না রাখার কারণ দেখিয়ে শ্রম আইন ২০০৬-এর লঙ্ঘনের অপরাধে পিতা ও সন্তানের এ দুই নামেই মামলা করেন কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর।


আসামি পক্ষের আইনজীবী জানান, শ্রম আইন মতে আট বছরের এই শিশুটি মামলায় আসামি হতে পারে না


পাঁচ মাস পর পাওয়া সে মামলার সমনে দেখা যায়, আসামি হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী জুবাইর। শিশুটির পরিবার বলছে, নিজ দোকানে শখের বসে ছেলের নাম লিখেই পড়েছেন বিপাকে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নিত্য নৈমিত্তিকভাবেই হেনস্তায় লিপ্ত অধিদফতরটি। যদিও কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর বলছে, তারা আইন মেনেই তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন।

মামলা দায়েরের পর প্রথমে এ বছরের ২৫ মার্চ ও পরে ২০ সেপ্টেম্বর শুনানির তারিখ দেয় শ্রম আদালত। তাতে শিশুটির আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়া নিয়ে বিব্রত তার পরিবার। ভুক্তভোগী শিশু জুবাইর বলেন, আমাকেও কোর্টে যাওয়া লেগেছে। সবাই আমাকে দেখে হাসছিল। শিশু জুবাইয়ের মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৮ নভেম্বর নির্ধারণ করেছে শ্রম আদালত।

এ ঘটনায় জুবাইর ও তার বাবা জুনাব আলীর মতো পবা উপজেলার পৌর মার্কেটের ৮০০ দোকান মালিকের অধিকাংশের দাবি, নিয়মের মধ্যে থেকে তারা ব্যবসা পরিচালনা করলেও এখানকার ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়তই মামলার শিকার হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ওই মার্কেটের এক দোকানি মুঠোফোনের মাধ্যমে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, মামলার প্রাপ্ত নোটিশে ঘটনার যে দিন-তারিখ উল্লেখ করে মামলা দেওয়া হয়, সেইদিন মূলত অভিযুক্ত দোকানির দোকানই বন্ধ থাকে। আর দোকান বন্ধ থাকার পরও মামলায় উল্লেখিত দিনের নোটিশ পাই। যা একেবারেই হাস্যকর। আর এরই ধারাবাহিকতায় এ শিশুকে আসামি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আসামি পক্ষের আইনজীবী এস আলম জামান রাসেল জানান, শ্রম আইন মতে আট বছরের এই শিশুটি মামলায় আসামি হতে পারে না। অবশ্য এ বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের উপমহাপরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া নিজেদের ভুল স্বীকার করছেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শ্রম আদালত,রাজশাহী,হেনস্তা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close