মো. সবুজ হোসেন, নওগাঁ

  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

৩০ বছর ধরে ঘরবন্দি নিপেন

অর্থাভাবে জুটছে না উন্নত চিকিৎসা

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নের ভান্ডারা গ্রামে নিপেন চন্দ্র পাল নামের এক মানসিক রোগীকে প্রায় ৩০বছর যাবৎ ঘরবন্দি করে রেখেছে তার পরিবার। এক সময় চিকিৎসা করতে পারলেও বর্তমানে অর্থাভাবে নিপেনকে ঘরের মধ্যে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। কোন সুযোগ-সুবিধা পা পাওয়ার কারণে গরীব এই পরিবার বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নিপেনের উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের সহায়তা চেয়েছে তার পরিবার।

সরেজমিনে জানা যায়, নিপেনের বয়স ৪২বছর। উপজেলার ভান্ডারা গ্রামের মৃত নরেশ চন্দ্র পালের ২য় সন্তান। ছোটবেলা থেকেই নিপেন ছিলেন খুবই মেধাবী। স্কুলে পড়ার সময় ১২বছর বয়সের পর হঠাৎ করেই নিপেনের মাঝে অস্বাভাবিক আচার-আচরন লক্ষ্য করে পরিবার। এরপর থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে নিপেন। গরীব পরিবার হওয়ার পরও অনেকবার নিপেনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু বর্তমানে আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় আর চিকিৎসা সেবা নিপেনের ভাগ্যে জুটছে না।

নিপেনকে বাহিরে ছেড়ে দিলেই মানুষকে মারপিট, গালিগালাজ করা, ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়াসহ নানা ধরনের অত্যাচার করার কারণে গত ৫বছর যাবৎ নিপেনের পায়ে লোহার শিকল দিয়ে একটি মাটির অন্ধকার ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছে তার পরিবার। বিয়ে দিলে হয়তো নিপেন ভালো হতে পারে ধারণা থেকে নিপেনকে বিয়ে দেয় তার পরিবার। বর্তমানে নিপেনের ঘরে ৭বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বয়স্ক মা সম্প্রতি বয়স্ক ভাতা পাওয়া শুরু করলেও নিপেনের পরিবার সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাই নিপেনের পরিবারের দাবী সরকারিভাবে যদি নিপেনকে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা হয় তাহলে হয়তো বা নিপেন সুস্থ্য হয়ে উঠতে পারে।

নিপেনের বড় ভাই নিতাই চন্দ্র পাল বলেন, ভাইকে ঘরবন্দি করে রেখেছি। এক সময় চিকিৎসা করতে পারলেও বর্তমানে অর্থের অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারছি না। দিন দিন নিপেনের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অত্যাচার করে দেখে নিপেনকে বাধ্য হয়েই শিকল দিয়ে ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছি।

নিপেনের স্ত্রী শিখা রানী পাল বলেন, আগে পাগলামি কম থাকলেও দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থের অভাবে আমার স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকারিভাবে সহায়তা পেলে উন্নত চিকিৎসা করানো যেতে পারে। হয়তো বা উন্নত চিকিৎসা পেলে আমার স্বামী স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া এক মেয়েকে নিয়ে বর্তমানে আমি মানবেতর জীবনযাপন করছি। সবকিছুর জন্য মানুষের কাছে হাত বাড়াতে হয়। তাই আমরা সরকারের সার্বিক সহযোগিতা চাই।

কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু বলেন, আমি নিপেনের বিষয়টি শুনেছি কিন্তু কেউ তার সহযোগিতার জন্য লিখিতভাবে জানায়নি। তবুও আমি তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে নিপেনের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও তার পরিবারকে সহায়তা করার প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে নিপেনের জন্য উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের এবং নিপেনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছে গ্রামবাসীরা।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঘরবন্দি,নিপেন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close