আল-আমিন মিয়া, পলাশ (নরসিংদী)

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

পলাশে পেপার মিলের ২০০ শ্রমিক-কর্মচারীর মানবেতর জীবনযাপন

শ্রমিক-কর্মচারীদের ৭ মাসের বেতন ও ৮ মাসের ওভারটাইম বকেয়া রেখেই নরসিংদীর পলাশে ক্যাপিটাল পেপার এন্ড পাল্ব ও ক্যাপিটাল বোর্ড বন্ধ করে দিলেও এখনো পর্যন্ত ২০০ শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতনসহ সকল পাওনাদি পরিশোধ করেনি মিল কর্তৃপক্ষ। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বেতন ভাতাসহ অন্যান্য পাওনাদি না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে শ্রমিকরা।

মিল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে কারখানার চেয়ারম্যান বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অবঃ) আব্দুল মান্নানের সই করা নোটিশ টানিয়ে দেয়া হয় কারখানার প্রধান গেটে। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, কারখানায় দীর্ঘমেয়াদে পূর্ব পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হওয়ায় উক্ত কারখানা প্রয়োজন অতিরিক্ততার কারণে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কারখানার সকল শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ১ ফেব্রুয়ারি হতে ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ছাটাই সংক্রান্ত সকল পাওনাদি শ্রম আইন মোতাবেক প্রদান করা হবে।

কর্তৃপক্ষ আর্থিক সংকটে থাকার কারণে কারখানার সকলকে গত জুলাই ২০১৯ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা আগামী ৮ মার্চ ২০২০ তারিখ, আগষ্ট ২০১৯ মাসের বকেয়া বেতন ভাতা আগামী ৭ এপ্রিল ২০২০ তারিখ, সেপ্টেম্বর ২০১৯ মাসের বকেয়া বেতন ভাতা আগামী ৭ মে ২০২০, অক্টোবর ২০১৯ইং মাসের বকেয়া বেতন ভাতা আগামী ৭ জুন ২০২০ তারিখ, নভেম্বর ২০১৯ মাসের বকেয়া বেতন ভাতা আগামী ৭ জুলাই ২০২০ তারিখ ও লে-অফ সংক্রান্ত যাবতীয় পাওনাদি আগামী ৯ আগষ্ট ২০২০ তারিখ এবং ছাটাই সংক্রান্ত আইনানুগ পাওনাদি আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখ কারখানার হিসাব বিভাগ থেকে পরিশোধ করা হবে। কিন্তু সেসব টাকা এখনো পর্যন্ত পরিশোধ করেনি মিল কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন গিয়ে শ্রমিকদের সাথে কথা বললে জাকির হোসেন নামে এক শ্রমিক প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, দীর্ঘ প্রায় ৮ মাস যাবত মিলটি বন্ধ থাকলেও মিলের চেয়ারম্যানের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমাদের এখনো পর্যন্ত ১টি কিস্তির টাকাও পরিশোধ করেনি মিল কর্তৃপক্ষ।

মিলের অপর শ্রমিক বুলু ও মিলের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, ২০১৯ সালের ঈদুল আজহার ছুটিতে মিলের উৎপাদন বন্ধ থাকার পর থেকে মিল কর্তৃপক্ষ আর মিলটি চালু করেনি। প্রথমে কারখানার উৎপাদন বন্ধ, পরে লে-অফ, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ এ সকল শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে সকলকে ছাটাই করে দেওয়া হয়। এদিকে মিলের ২০০ শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা পাওনাদি না পাওয়ার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

মিলের শ্রমিক ফিরোজ আক্তার এ প্রতিবেদককে আরও জানায়, দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের বেতন-ভাতাসহ সকল পাওনাদি না দেয়ার ফলে আমরা এখনো মিল এলাকাতেই অতি কষ্টে ছেলে-মেয়ে নিয়ে পাওনা টাকার আশায় খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছি। তা ছাড়াও অনেক শ্রমিক রিক্সা, ভ্যান চালিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

জানতে চাইলে ডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান সাবের উল হাই বলেন, বিরাট সমস্যার মধ্যে দিন পার করছেন মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে মিল বন্ধের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। আমি আশা করছি অবিলম্বে মিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধ করে দিবে।

জানতে চাইলে মিলের ডিজিএম মীর আলী জানান, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শ্রমিক ছাটাই ও মিল বন্ধের নোটিশ দিয়েছি। কবে নাগাদ শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধ করবে এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না দাবি করেন এ কর্মকর্তা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কর্মচারী,মানবেতর,জীবনযাপন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close