নিউজ ডেস্ক

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

কে হচ্ছেন আল্লামা আহমদ শফীর উত্তরসূরি?

কে হচ্ছেন আল্লামা আহমদ শফীর উত্তরসূরি? অন্তত দশজন আলেমকে এমন প্রশ্ন করলে তারা বলেন, আহমদ শফী বিকল্পহীন নেতা ছিলেন।

তিনি এমন সময় কওমি অঙ্গনের হাল ধরেছিলেন যখন পারস্পরিক অনৈক্য, অনাস্থা ও বিভেদের জেরে দেশের মাদ্রাসা শিক্ষায় বিপর্যয় নেমে এসেছিল।

ধর্মপ্রাণ মানুষ চরম হতাশায় পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি মাঠে এসে শুধু ধর্মপ্রাণ মানুষই নয় বরং দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এক কাতারে নিয়ে আসেন।

মাদ্রাসা শিক্ষায় আমূল সংস্কার সাধনসহ কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি আদায়ে তার ভূমিকা ছিল অনন্য। বর্তমানে ৬টি বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশের সব দাওরায়ে হাদিস কওমি মাদ্রাসা আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়ার অধীনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে।

এ ছয়টি বোর্ডকে একীভূত করা শুধুমাত্র তার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। কাজেই তার পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের দায়িত্বে যেই আসেন না কেন, তিনি যে তার বিকল্প হবেন না- সেটা নিশ্চিত বলা যায়।

হেফাজতে ইসলাম, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) ও আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া ও হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান ছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

শুক্রবার তার মৃত্যুর পর কওমি অঙ্গন ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে- কে হবেন এসব প্রতিষ্ঠানের ধারক- আল্লামা শফীর উত্তরসূরি?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতদিন হাটহাজারী মাদ্রাসা, বেফাক-হাইয়া ও হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব এককেন্দ্রিক থাকলেও এখন তিনটি আলাদাভাবে পরিচালিত হবে। কারণ আল্লামা শফীর মতো সর্বজনমান্য এমন কেউ নেই, যাকে সবাই একবাক্যে মেনে নেবেন।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী গত শুক্রবার রাতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের পরবর্তী আমীর কে হবেন তা কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে।

আল্লামা শফীর ইন্তেকালের পর সংগঠনের কার্যক্রমে কোনও প্রভাব পড়বে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বাবুনগরী বলেন, প্রভাব তো কিছু হবেই। ওনার মতো তো আর মানুষ পাওয়া যাবে না। আমার দায়িত্ব হলো এখন কাউন্সিল ডাকা। কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই হবে।

তবে চট্টগাম অঞ্চলের হেফাজত কর্মীরা মনে করছেন বর্তমান নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বা মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী দুজনের যে কোনো একজনই হবেন হেফাজতের পরবর্তী আমীর।

ঢাকা মহানগর হেফাজতের আমীর আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর কথা হাইকমান্ডের অনেকের মুখে থাকলেও কাসেমীর রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় শেষ দৌড়ে তিনি টিকতে পারবেন না বলে অনেকের ধারণা। এক্ষেত্রে হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক শেখ আহমদও বিবেচনায় আসতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর মিডিয়া সেলের সদস্য মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ আরমান বলেন, সারা দেশে বিস্তৃত এবং আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত সংগঠনের মূল নেতৃত্বে অভিজ্ঞ, দূরদর্শী এবং নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন ব্যক্তি আসা উচিত।

তিনি বলেন, অতীতে হেফাজতে ইসলামের হোঁচট খাওয়া এবং তৎপরতা থমকে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা। সুতরাং আমীর নির্বাচনে তাড়াহুড়ো না করে একটু ধীরস্থিরে এগোনো উচিত। যদিও এই মুহূর্তে হেফাজতে ইসলাম সংগঠনটির উপযোগিতা ও আবেদন কতটুকু আছে- সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

কার্যত শনিবার দুপুরে আহমদ শফীর দাফন হওয়ার পরপরই দেশের বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্বশীলদের মাঝে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে মাত্র।

শনিবার সন্ধ্যায় হাটহাজারীতে অনুষ্ঠিত মজলিসে শূরার বৈঠকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে তিন সদস্যের একটি কমিটিকে।

তারা হলেন- মাদ্রাসার ফতোয়া ও আইন বিভাগের প্রধান মুফতী আবদুস সালাম, সহকারী পরিচালক মাওলনা শেখ আহমদ ও সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা ইয়াহহিয়া। বৈঠকে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে নাযেমে তালিমাত (শিক্ষা সচিব) এবং প্রধান শায়খুল হাদীস হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

২০০৫ সালে বেফাকের সভাপতি নির্বাচিত হন আহমদ শফী এবং ২০১৭ সালে নির্বাচিত হন আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়ার চেয়ারম্যান । গঠনতান্ত্রিকভাবে বেফাকের চেয়ারম্যান যিনি হবেন তিনিই আল-হাইআতুল উলয়ার চেয়ারম্যান হওয়ার কথা।

বেফাকের চেয়ারম্যান কে হবেন? এমন প্রশ্নের সঠিক জবাব বেফাকের দায়িত্বশীলদের কেউই এ মুহূর্তে দিতে না পারলেও বেফাকের বর্তমান সহসভাপতি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী ও মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের কথাই চাউর হচ্ছে। তবে তারা দু’জনই ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে অনেকের আপত্তি রয়েছে।

বেফাকের বর্তমান সহ-সভাপতি যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা মাহমুদুল হাসান ও রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মুফতি মনসুরুল হকের কথাও কেউ কেউ বলছেন।

এক্ষেত্রে যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা মাহমুদুল হাসান সবদিক বিবেচনায় এগিয়ে রয়েছেন। সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না থাকার পাশাপাশি সারা দেশের আলেমদের মধ্যে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এছাড়া অতীতে তাকে নিয়ে তেমন বিতর্কও দেখা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কওমির এক শীর্ষ আলেম বলেন, আল্লামা শফীর পর এখন বেফাক আর হাইয়ার চেয়ারম্যান পদটি খুবই গুরুত্বের দাবি রাখে। এ পদে এমন কাউকে বসাতে হবে, যার রাজনৈতিক কোনো অভিলাষ থাকবে না, পাশাপাশি তিনি সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকবেন। সে হিসেবে আল্লামা মাহমুদুল হাসানের বিকল্প আপাতত কাউকে দেখা যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেফাকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, বেফাকের বর্তমান মাহসচিব আল্লামা আব্দুল কুদ্দুসও বেফাকের পরবর্তী চেয়ারম্যান হতে পারেন। তবে সাম্প্রতিক কিছু বিতর্কে বিষয়টি সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন অনেকে।

অবশ্য খুব শিগগিরই বেফাক ও হাইয়া কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ের সমাধানে বসবে বলে অনেক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এ কথা সবাই স্বীকার করছেন যে, এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে যাকেই মনোনীত করা হোক, আল্লামা শফীর মতো সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা কারও নেই।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আল্লামা আহমদ শফী,উত্তরসূরী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close