reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ অক্টোবর, ২০২২

ডাইনোসর বিলুপ্ত যে কারণে...     

ফাইল ছবি

জীবজগতের হাজার হাজার প্রজাতির প্রতি মানুষের কৌতূহলের সীমা নেই। কেমন করে বেঁচে থাকে এসব প্রাণী, তাদের জীবনযাপন কিংবা জীববৈচিত্র্য রায় তাদের ভূমিকা ইত্যাদি বিচারে মানুষের কৌতূহলের ধরন থাকে ভিন্ন।

জীবিত প্রাণীগুলো নিয়ে মানুষের আগ্রহ এবং শিক্ষার পাশাপাশি বিলুপ্ত প্রাণী সম্পর্কে জানার চেষ্টাও আছে মানুষের মধ্যে। বিশেষ করে বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান-শিক্ষার্থীদের। সে রকম একটি প্রাণী হলো ডাইনোসর। পৃথিবীতে মানুষের জন্মের বহুকাল আগে বিলুপ্ত এই অতিকায় প্রাণীদের সম্পর্কে বলা যায় মানুষের আগ্রহ এখনো তুমুল।

Dinosaur শব্দের অর্থ ভয়ংকর টিকটিকি (Terrible Lizard)। সরীসৃপ শ্রেণির এই ভয়ংকর প্রাণী পৃথিবীতে বাস করত মোটামুটি ২৪ কোটি বছর থেকে সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে। প্রকৃত অর্থে Jurassic Period-ই ছিল ডাইনোসরদের রাজত্বকালে। সে সময় অন্যান্য প্রাণীর বিকাশ ঘটলেও এর দাপটে অনেক প্রজাতিই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ১৮৪১ সালে প্রাপ্ত ডাইনোসরের বেশ কিছু ফসিল (জীবাশ্ম) নামকরণের সময় স্যার রিচার্ড ওয়েন এই নামকরণ করেছিলেন। ধারণা করা হয়, এক সময়ে উত্তর মেরু ছাড়া সমগ্র পৃথিবীতেই ডাইনোসরের রাজত্ব ছিল। জলে, স্থলে, আকাশে, বিভিন্ন ধরনের ডাইনোসরের অবাধ বিচরণ ছিল। আজকের পৃথিবীতে যেমন মানুষের রাজত্ব, তেমনি একসময় এ পৃথিবী ছিল ডাইনোসরদের পৃথিবী।

বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, অধিকাংশ ডাইনোসরের চারটি পা ছিল। কেউ কেউ চার পায়ে হাঁটত, আবার কেউ দুই পায়ে, আর সামনের পা দুটো হাতের মতো ব্যবহার করত। কিছু ডাইনোসর আকাশে পাখির মতো উড়ত, আবার কেউ কেউ পানিতে বিচরণ করত।

আকার-আকৃতির দিক থেকেও ছিল ভিন্নতা। যেমন-Argentinesaurus, Senismosaurus, Ultrasauros , Brachiosaurs, Supersaurus এগুলো ছিল রীতিমতো দানবাকৃতির। এগুলোর দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১০০ ফুট, উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। আবার Compsognathus ছিল মুরগির আকারের। কোনো প্রজাতি ছিল হিংস্র-মাংসাশী, কোনো প্রজাতি ছিল তৃণভোজী। আবার অনেক প্রজাতি ছিল, যারা একই সঙ্গে উদ্ভিদভোজী এবং মাংসভোজী ছিল।

স্টিভেন স্পিলবার্গের ‘জুরাসিক পার্ক’ চলচ্চিত্রটিতে আমরা দেখেছি বিভিন্ন ধরনের ডাইনোসর, তাদের গায়ের রঙ, তাদের আওয়াজ। তবে সবই কাল্পনিক, এখনকার মানুষের ধারণা। আজকের দিনে যদি ডাইনোসরদের আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় তাহলে চিত্রটা কেমন হবে, ভাবলেই আমাদের গা শিউরে উঠে। কিন্তু একসময় পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ানো এই ভয়ংকর প্রাণীটা কেন আজ বিলুপ্ত, বিজ্ঞানীদের গবেষণায় এর বেশ কিছু কারণ জানা গেছে। আসুন এমন কয়েকটি কারণ জেনে নিই-

খাদ্য হিসেবে ডাইনোসরের বিলুপ্তি : এক সময় সব মাংসাশী ডাইনোসর সব উদ্ভিদভোজী ডাইনোসরদের খেয়ে ফেলে। পরে খাদ্যের অভাবে মাংসাশী ডাইনোসরদেরও বিলুপ্তি হয়।

উল্কাপাত : একসময় মার্কিন বিজ্ঞানীরা যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনায় ফাগস্টাকে একটি বিশাল গর্ত আবিষ্কার করেন এবং যেখানে উল্কাখন্ডের সন্ধান পান। ধারণা করা হয় এই উল্কাখন্ড পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার ফলে সমগ্র পৃথিবী ধুলা এবং জলীয় মেঘে ঢেকে গিয়েছিল। এর ফলে সূর্যকিরণ পৃথিবীতে পৌঁছত না। এতে অনেক সবুজ উদ্ভিদের বিলুপ্তি ঘটে। আর খাদ্যের অভাবে উদ্ভিদভোজী ডাইনোসরগুলোরও মৃত্যু হয়।

তাপমাত্রার পরিবর্তন : জীবজগতে সরীসৃপ প্রাণীদের তাপমাত্রার সঙ্গে অভিযোজন করার মতো সবচেয়ে কম, যার প্রভাব পড়েছিল ডাইনোসরদের ওপরেও। মহাদেশগুলোতে বিচিত্র তাপমাত্রাগত পার্থক্যের কারণে ডাইনোসরগুলো বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ছোট প্রজাতির সরীসৃপরা পাহাড়-পর্বতের গুহায় আশ্রয় নিতে পারলেও বিশালদেহী ডাইনোসরগুলো ছিল অসহায়।

খাদ্যাভাব : মহাদেশগুলো যখন বিচ্ছিন্ন হচ্ছিল তখন তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাতের আধিক্য বা অনাবৃষ্টি, তুষারপাত ইত্যাদির বিচারে পরিবেশ পাল্টে যাচ্ছিল। ফলে প্রাণিজগতের বিভিন্ন প্রজাতি যেমন লোপ পাচ্ছিল, তেমনি বহু প্রজাতির উদ্ভিদও বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে উদ্ভিদভোজী প্রাণীদের খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছিল প্রবলভাবে। বিশেষ করে উদ্ভিদভোজী ডাইনোসরগুলো এর শিকার হয়েছিল প্রথম। তাপমাত্রাগত পরিবর্তনে এরা কাহিল হয়ে পড়েছিল, সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত খাদ্য না পাওয়ার কারণে এদের বিলুপ্তি ঘটেছিল। অন্যদিকে মাংসাশী ডাইনোসরগুলো তাপমাত্রা এবং খাদ্য হিসেবে উদ্ভিদভোজী প্রাণীর অভাবে মারা গিয়েছিল একটু বিলম্বে। তথ্য সূত্র : এনডিটিভি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ডাইনোসর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close