অর্থনৈতিক প্রতিবেদক:
ডিএসই ও বিজিএমইএ’র সমঝোতা স্মারক
পোষাক শিল্পের সহযোগিতায় পুঁজিবাজার
পোষাক শিল্পের উন্নয়ন ও অর্থায়নের পাশাপাশি দেশের পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে যৌথভাবে কাজ করবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস মেনুফেকশ্চার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। এ লক্ষ্যে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
উত্তরাস্থ বিজিএমইএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সমঝোতা স্মারকের মধ্য দিয়ে পোষাক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারের মাধ্যমে (আরএমজি) প্রচার ও অর্থায়নের উদ্দেশ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা; আরএমজি কোম্পানিগুলোর উন্নতির জন্য জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার; যৌথভাবে প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, সম্মেলন, সচেতনতামূলক পোগ্রাম, পুঁজিবাজার মেলা বা অন্য যেকোন কর্মসূচির আয়োজন; আরএমজি কোম্পানির কর্মকর্তাদের পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা; গ্রীন ফাইন্যান্সিংয়ে (সবুজায়নের অর্থনীতি) উন্নীত করার জন্য লিডস সার্টিফাইড বা গ্রিন আরএমজি কোম্পানির বিষয়ে জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়; বিভিন্ন সামাজিক এবং সুশাসন (ইএসজি) সহযোগিতায় উভয় পক্ষই ইএসজি এবং টেকসই অর্থায়নে আরএমজি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ; তহবিল সংগ্রহ ও তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে আরএমজি কোম্পানির তথ্য, প্রকাশনা ও তথ্য প্রদান এবং পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য এবং ডেটা বিনিময় করবে।
সমঝোতা স্মারকে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার এবং বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান স্বাক্ষর করেন। এসময় ডিএসই’র পক্ষে আরো ছিলেন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু, পরিচালক মোঃ শাকিল রিজভী, শরীফ আনোয়ার হোসেন, ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম সাইফুর রহমান মজুমদার সহ ডিএসই'র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অপরদিকে বিজিএমইএর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, পরিচালক মিজানুর রহমান, স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রেস, পাবলিকেশন অ্যান্ড পাবলিসিটি চেয়ারম্যান শোভন ইসলাম, স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্রেড ফেয়ার চেয়াম্যান মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন এবং স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ইউডি-ওভেন অ্যান্ড নিট চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে ডিএসই’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, আজকের দিনটি একটি বিশেষ দিন। দেশের অর্থনীতির প্রধান দুটি স্তম্ভ: ডিএসই এবং বিজিএমইএর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগীতার একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হচ্ছে। এই সহযোগিতা শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি বৃদ্ধি নয়, এটি একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সম্মিলিত দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি'র প্রবৃদ্ধিতে বিজিএমইএর অধীন গার্মেন্টস কোম্পানিগুলোর বিশাল ভূমিকা রয়েছে। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারও বিশাল ভূমিকা রাখছে। বড় বড় কোম্পানিগুলো যত বেশি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে, পুঁজিবাজার তত বেশি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের অর্থায়ন মুলতঃ ব্যাংকের মাধ্যমে হয়ে থাকে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এটি আসলে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে হওয়া উচিত। আর পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে ভাল ভাল গার্মেন্টস কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির প্রয়োজন। পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করা ডিএসই'র বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের অন্যতম উদ্দেশ্য। আমরা পুঁজিবাজারের মাধ্যমে আপনাদের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমরা প্রয়োজনে আপনাদের সঙ্গে আবার বসবো, যাতে আপনাদেরকে পাশে নিয়ে গার্মেন্টস খাতের ভাল ভাল কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নেয়া যায়। আর এজন্য ডিএসই আপনাদের সব ধরণের সহযোগিতা করবে।
ড. হাসান বাবু আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের শীর্ষ গ্রীন ফ্যাক্টরীগুলো পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হলে বিদেশি ক্লায়েন্টের নিকট ব্র্যান্ডিং হবে এবং একটি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের মূল্যায়ন বেড়ে যাবে। কারণ বিদেশি গ্রাহকরা সব সময় পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি হওয়াকে অন্যতম গুণাবলী হিসেবে মনে করে। এ বিষয়ে বিজিএমইএ'র প্রেসিডেন্টও একমত পোষণ করেন।
সমঝোতা স্বাক্ষরের পরপরই ডিএসই ও বিজিএমইএ যৌথভাবে ২০২টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী ও ৫০টি শীর্ষ রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে পুঁজিবাজারের সেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে এই তালিকা হস্তান্তর করা হয়। শীঘ্রই এ সংক্রান্ত সিডিউল ঘোষণা করা হবে।
বিজিএমইএ'র প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান ডিএসই'র চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ২০২টি গ্রীন ফ্যাক্টরী রয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ ১৫ গ্রীন ফ্যাক্টরীর মধ্যে বাংলাদেশের রয়েছে ১৩টি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেডিমেট গার্মেন্টসের গুরুত্ব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ডিএসই ও বিজিএমইএর সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে উভয় পক্ষ পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি দেশের আরএমজি সেক্টরে ব্র্যান্ডিংয়ে ডিএসই কাজ করবে। এই চুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের শীর্ষ গ্রীন ফ্যাক্টরীগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য ডিএসই প্রয়োজনীয় মূলধন উত্তোলনে সর্বাত্মক সহযোগীতা এবং এ নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচী ও সেমিনারের আয়োজন করবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীগুলো সীমিত সংখ্যক (৫টি) প্রোডক্ট নিয়ে কাজ করে। অথচ আরও একশটি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে।