অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সমস্যা খেলাপি ঋণ ও সুশাসন : বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর
দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের অভাবকে প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করে এ থেকে উত্তোরণে নৈতিকতার অনুশীলন ও তার প্রয়োগের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বুধবার (২৪ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে দুই দিনব্যাপী ‘ব্যাংকিং অন ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক এক সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। দেশীয় ব্যাংকিং খাতে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন সামিট প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে করপোরেট সুশাসন ও খেলাপি ঋণ। ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বর্তমান অর্থনীতির সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ। এর জন্য করপোরেট সুশাসনের বিকল্প নেই। আমাদের প্রয়োজন ব্যাংকিং আচরণে নৈতিকতার চর্চা, ব্যাংক কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সুশাসন নিশ্চিত করা। এই নীতিমালা বাস্তবায়নে প্রধান নির্বাহীদের বড় ভূমিকা রয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে ব্যাংক খাত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেন, আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। এর মধ্যে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এবং বাংলা কিউআর অন্যতম। এখন এবিবির উদ্যোগে নতুন করে যুক্ত হলো ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন।
‘আমাদের লক্ষ্য ২০২৭ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ ক্যাশলেস লেনদেন নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব ডেবিট কার্ড চালু হতে যাচ্ছে। ভিসা-মাস্টার কার্ডের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের ব্যাংকগুলোতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড সেবা দিচ্ছে। এতে প্রতি বছর লভ্যাংশ হিসেবে দেশ থেকে মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাচ্ছে তারা। বাংলাদেশের নিজস্ব ডেবিট কার্ড চালু হলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা কমে যাবে। নিজস্ব ডেবিট কার্ড চালুর ক্ষেত্রে আমরা খুব কাছেই চলে এসেছি।’
ডিজিটাল মাধ্যমে ট্রান্সফরমেশনের হুমকি সম্পর্কে সচেতন করে ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথাও বলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর।
আব্দুর রউফ বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দ্বারপ্রান্তে চলে আসায় ব্যাংকিং খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়বে। বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাংকই কোর ব্যাংকিং সল্যুশন সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের ফলে ব্যাংকিং ব্যবসায় বৈচিত্র্য চলে আসবে। এজন্য ব্যাংকিং আচরণেও পরিবর্তন হবে। এজন্য ব্যাংকিং খাতে নতুন যে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে তার জন্য ব্যাংকগুলো আরো প্রস্ততি নিতে হবে। ব্যাংকারদের এ বিষয়ে সচেতন করতে আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সম্মেলন নিয়ে এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, এবিবির ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন সামিট বাংলাদেশে দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাংকগুলো যে কৌশল গ্রহণ করতে পারে তা বিশ্লেষণ করে মূল্যবান পর্যবেক্ষণ দেওয়া এ সামিটের লক্ষ্য। এতে আর্থিক সেবা খাতকে প্রভাবিত করে এমন বিদ্যমান নীতি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো নিয়ে গবেষণায় জোর দেওয়া হবে। এ শিল্পের স্টকহোল্ডার, ইকোসিস্টেম এনাবেলার্স ও নীতিনির্ধারকদের এগিয়ে যাওয়ার পথে সুপারিশ দিয়ে এ সম্মেলন সহযোগিতা এবং একীভূত লক্ষ্য অর্জনে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে বৃদ্ধি করেছে।
‘ব্যাংকিং অন ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ সম্মেলনটি শিল্পে অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী এবং শিল্প বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অর্থপূর্ণ আলোচনা, ইন্ডাস্ট্রির অন্তর্বর্তী মূল্যবান তথ্য আদান-প্রদান এবং নেটওয়ার্কিং সুযোগের জন্য একটি প্ল্যাটফরম হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি জ্ঞান বণ্টন, সহযোগিতা এবং ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে নতুন সম্ভাবনা খুঁজে পাওয়ার পথ আরো সহজ করবে।’
সামিটে বাংলাদেশের ৪৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১৫০ জনের বেশি কর্মকর্তা অংশ নিয়েছেন। সম্মেলন উপলক্ষে এবিবি এবং পিডব্লিউসি যৌথভাবে ‘ব্যাংকিং ইভল্যুশন : ড্রিভেন বাই ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এছাড়া সম্মেলনে বিভিন্ন সেশন পরিচালনা করেন ডিবিএস সিঙ্গাপুর, ইঅ্যান্ডওয়াই, আইবিএম, বাংলাদেশ ব্যাংক, গ্রামীণফোন, ইউনিলিভার, হুয়াওয়ে, ওরাকল, আইটি কনসালট্যান্ট লিমিটেড, লেন্ট্রা, থাকরাল, ওরোজেনিক, মাস্টারকার্ড, কেপিএমজি, ডেলয়েট, এটুআই, বিআইবিএমসহ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানি এবং সংস্থার বিশেষজ্ঞরা।