অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

  ২২ মে, ২০২৩

আসছে বড় বাজেট, ভর্তুকি থাকছে জ্বালানিতে 

ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নেওয়ার সময় সংস্থাটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে কয়েকটি নির্দেশনা ও শর্ত দেওয়া হয়েছে। এ সব নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে এ ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। এতে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জীবনে দেখা দিয়েছে আর্থিক অনটন। আগামী সংসদ নির্বাচনে সাধারণ মানুষের সমর্থন পেতে চায় সরকার। একারণে আইএমএফের নির্দেশগুলোর সবদিক বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সরকার ধীরে চল নীতি গ্রহণ করেছে।

আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন প্রকার জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতে ভর্তুকি থাকবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বিভিন্ন বৈঠক এবং একাধিক সরকারি সূত্রে এসব কথা জানা গেছে। এছাড়া জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে হবে ৭ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকার।

আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানা গেছে, সাম্প্রতিককালে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেলে চাপে পড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ঋণের জন্য আবেদন করে সরকার। তবে এই ঋণ যেন যথাসময়ে পরিশোধ হয়, সেজন্য সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমানোসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারকে। এসব নির্দেশনা মানায় এরই মধ্যে ঋণের প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছে সরকার। তবে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, অপরদিকে এসবের কারণে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বল্প ও মাঝারি আয়ের পরিবারগুলো সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। মানুষকে এই আর্থিক কষ্ট থেকে পরিত্রাণ দিতে এবার আইএমএফের নির্দেশনাগুলোকে পাশ কাটাতে যাচ্ছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার চাইলেও আগামী বাজেটে ভর্তুকি খুব বেশি কমাতে পারবে না। কারণ চাপে থাকা অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার করতে হবে। সেক্ষেত্রে কয়েকটি খাতে ভর্তুকি কমানো যাচ্ছে না। আইএমএফের চাপ ও শর্ত সত্ত্বেও না, এমনই ভাবছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এই আকার ৭ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি ভর্তুকির আকারও বাড়ানো হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৮১ হাজার ৪৯০ কোটি। কিন্তু আসন্ন বাজেটে এই পরিমাণ ৩৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্যাস খাতে চলতি অর্থবছর ৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বাজেটেও ভর্তুকি এই পরিমাণ অব্যহত থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সম্প্রতি স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি কমিয়েছে সরকার। আগামী অর্থবছরেও এই খাতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসছে না। তবে বিদ্যুৎ খাতে চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ১৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা আরো ৬ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আসন্ন বাজেটে এই খাতে ভর্তুকি আরো বাড়তে পারে।

সূত্র জানায়, গত এপ্রিলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল অন বাজেট ম্যানেজমেন্ট, কারেন্সি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রেটের এক সভায় বিদ্যুৎ সচিব বলেছেন, প্রতি মাসে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ হারে বাড়ানোর কথা থাকলেও গতমাসে তা বাড়ানো হয়নি। আগামী দুমাসের মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই। সে সময় অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা সভা শেষে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ব্যবসায়ীরা প্রতিমাসে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছে। কিন্তু সরকার প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী জুলাই থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে। এর বাইরে কৃষি উৎপাদনকে প্রাধান্য দিয়ে সারে ভর্তুকিও বাড়তে পারে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলেছেন, বিশ্ববাজারে সারের দাম কিছুটা কমলেও এখন পর্যন্ত কোভিডপূর্ব মূল্যে ফিরে আসেনি। ফলে এই খাতে ভর্তুকি বাড়বে। বর্তমান বাজেটে এই খাতের জন্য বরাদ্দ আছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে খাদ্য ভর্তুকিসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়াচ্ছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আগামী অর্থবছরে খাদ্য ভর্তুকিতে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ রাখা হতে পারে। টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে কমমূল্যে খাদ্যপণ্য দেওয়াসহ সরকার পরিচালিত খোলা বাজারে বিক্রয় (ওএমএস) এবং ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি) কর্মসূচিগুলোর সরবরাহ ঠিক রাখতে এই বাড়তি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এছাড়া বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার মতো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ৭ লাখ ৩৫ হাজার বাড়ানো হচ্ছে। শুধু উপকারভোগীর সংখ্যাই নয়, মাসিক ভাতার হারও বাড়ানো হচ্ছে এসব খাতে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা, যা এখন প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে।

পিডিএসও/এমএ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভর্তুকি থাকছে জ্বালানিতে
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close