অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

  ২৭ মার্চ, ২০২৩

২০২৩-২৪ অর্থবছরের আসন্ন বাজেট নিয়ে প্রেস ব্রিফিং 

সুশাসন নিশ্চিত ও নীতি কাঠামো সংস্কার চায় সিপিডি

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

আগামী বাজেটে ৬টি বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সুশাসন নিশ্চিত ও নীতি কাঠামোর সংস্কারের মাধ্যমে বাজেট প্রণয়নের সুপারিশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এগুলো হলো সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব কাঠামোর সংস্কার, নিত্যপণ্যের দর বৃদ্ধি, ভর্তুকির পুনর্বিন্যাস, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ রক্ষা। সামষ্টিক অর্থনীতিতে এই ৬টি খাত সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে বলে মনে করে সংস্থাটি। এসব খাতে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা মোকাবেলার কৌশল নির্ধারণে আগামী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট তৈরির জন্য বেশকিছু সুপারিশও দিয়েছে সংস্থাটি।

এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় রাজস্বনীতি, মুদ্রানীতি ও প্রাতিষ্ঠানীক নীতির মধ্যে সমন্বয়ের উদ্যোগ; বিকল্প জ্বালানীর উৎস বৃদ্ধিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে কর ছাড় ও বিদ্যুতের দাম বাজার মুখী করা, বিদ্যুতে ভর্তুকি রাখা; বিদ্যমান ভর্তুকি খাতের পুনর্বিন্যাস;সামাজিক সুরক্ষার পরিসর বাড়ানো ও সব খাতে সংস্কার ও সুশাসন নিশ্চিত করা। তবে এই সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন বলেও প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়।

সোমবার রাজধানীতে সিপিডির নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট এমন সময়ে করা হচ্ছে; যখন বাংলাদেশের অর্থনীতি অভ্যন্তরীণ ও বাহিরের বেশকিছু ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এসব ঝুঁকি মোকাবেলার নীতিকাঠামো প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের অন্যতম হাতিয়ার বাজেট, এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনী বছরে সরকার কতোটা দক্ষতার সঙ্গে সেই বাজেট প্রণয়নে মনোনিবেশ করতে পারবে তা একটা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া চলতি অর্থবছরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন সিপিডির এই নির্বাহী। এক্ষেত্রে গত বছরের ও চলতি অর্থবছরে ৬ মাসের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঘাটতি বিগত বছরের চেয়ে বেশি হওয়ার কারন ব্যাখ্যায় ফাহিমদা খাতুন বলেন, রাজস্ব আদায়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ভ্যাট খাত। আর আমদানি শুল্ক নির্ভর রাজস্ব কাঠামো হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার কড়াকড়িতে আমদানি কমেছে। ফলে এবার খাতটি থেকে কম আদায় হয়েছে। এ কারণে রাজস্ব আদায়ে ক্রমাগত ঘাটতির তথ্য জানাচ্ছে আগামী জুন শেষে তা ৭৫ হাজার কোটি টাকায় ঠেকবে।

এই সমস্যা মোকাবেলায় করের আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি বড় ব্যবসায়ীদের যে কর ছাড় দেওয়া হয় তা বন্ধ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি রপ্তানি খাতে যেসব পণ্য শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়েছে তাদের ছাড় দেওয়ার আর প্রয়োজন নেই।

এসময় সিপিডি মূল্যস্ফীতির কারণে এবারও ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব করে গতবারের মতো।

রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় সরকার ছয় মাসে ব্যাংকিং খাত থেকে ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে জানিয়ে সিপিডি উল্লেখ করে, এতে ব্যাংকিং খাতে তারল্যর পরিমাণও আরো কমে যাচ্ছে। নিয়মিত ব্যাংক ঋণ মূল্যস্ফীতিকে আরো বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

সুদহার, বিনিময় হার বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়ার মতো মুদ্রানীতি প্রণয়ন করার পক্ষের অবস্তান পুনর্ভ্যক্ত করে সিপিডি।

ব্যাংক খাতের দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারী বাড়ছে। এর সমাধান কোন পথে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তর ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘‘আমরা ব্যাংকিং খাতের প্রকৃত অবস্থা জানতে সাময়িক সময়ের জন্য ব্যাংকিং কমিশন গঠন করার জন্য বলে আসছি। কমিশন তাদের সুপারিশগুলো সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবে। সে অনুযায়ী কাজ করলে ফলাফল ভালো আসবে।’’

জ্বালানী খাত নিয়ে বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম কর্পোরেশন(বিপিসি) লাভজনক রয়েছে জানিয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন,‘‘সরকার বিদ্যুত খাতে অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি(সক্ষমতা) এর কেন্দ্রগুলো বসিয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে এ খাতে দেওয়া ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার কারণে। এখন বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে এ খাতের ব্যবসায়ীদের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে দেওয়া ভর্তুকির দায় জনগণের উপর চাপাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙগনে তেলের দাম কমলেও আমাদের বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যুত খাত বিভিন্ন রকম প্রক্রিয়াগত দুর্বলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের দর বাজার অনুযায়ী হওয়া প্রয়েজন।

নিত্য পণ্যর দর বৃদ্ধিতে আমদানি পণ্যে শুল্ক সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে জানিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়ার পরও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যর দাম কমেনি বাংলাদেশে। উল্টো বেড়েছে নিয়মিত। এজন্য আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অনেক দুর্বলতা রয়েছে।

রপ্তানি বাড়াতে বিভিন্ন হারে প্রণোদনা দিয়ে থাকে বাংলাদেশ বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে। এখাতে যে প্রণোদনা দেওয়া হয় তাও ভর্তুকি হিসেবেই যাচ্ছে বলে মনে করেন গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন,‘‘ রপ্তানিসহ যে কয়টি খাত শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়েছে তাদের প্রণোদনাগুলো এখন উদীয়মান খাতগুলোকে দেওয়া প্রয়োজন।

কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রেখে সামাজিক সুরক্ষার পরিসর বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করেন গোলাম মোয়াজ্জেম।তিনি বলেন, ‘সামাজিক ‍সুরক্ষার যে আওতা রয়েছে তার পরিসর বাড়াতে হবে।’

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের দুরাবস্থার কথা উল্লেখ করে ফাহমিদ খাতুন বলেন, বর্তমানে চিকিৎসা খাতে ১০০ টাকা খরচ হলে তার ৭০ শতাংশেরই যেগান দেয় জনগণ। এখাতে গুরুত্ব ও বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি করা হয়।

পরিবেশ ইস্যুতে ডিজেলের বিকল্প হিসেবে নবয়ানযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিপিডি,বাজেট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close