নিজস্ব প্রতিবেদক
‘লাভের সুখ’ হতাশ ব্যবসায়ীরা
বাণিজ্য মেলার পর্দা নামল

‘ভালো লাভ’ করেও মুখ ভার করেই ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ছাড়লেন ব্যবসায়ীরা। অর্থাৎ মেলার ২৭তম আসরের পর্দা নামল মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি)। শেষ দুই দিন ক্রেতা-দর্শনার্থী আকর্ষণে স্টল মালিকরা পণ্যে দিয়েছেন বিশেষ ছাড়। লোভনীয় ছাড় পেয়ে ক্রেতাদের কেনাকেটা করতে দেখা যায়। তবুও সন্তুষ্ট নন ব্যবসায়ীরা।
কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, এবার মেলায় স্টল নিতে হয়েছে দালালদের মাধ্যমে চড়া দাম দিয়ে। আবার মেলায় দর্শনার্থী বাড়লেও কাক্সিক্ষত বেচাকেনা হয়নি। আমরা এক সপ্তাহ সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু তা নাকচ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সময় বাড়ানো হলে ভালো হতো।
তুর্কি প্যাভিলিয়নের ম্যানেজার সাইয়ান বলেন, অনেকেই শুরু থেকে স্টল চালু করতে পারেনি। শেষদিকে বেচাকেনা বাড়লেও কাক্সিক্ষত ব্যবসা হয়নি। আমাদের স্টলে মোট ২০ জন কাজ করেছেন। সবার বেতন দিয়ে তুর্কিরা লাভবান হবে বলে মনে হয় না। এমন হতে থাকলে তারা সামনে স্টল নিতে আগ্রহী হবেন না। সেদিকেও কর্তৃপক্ষের খেয়াল রাখা উচিত।
স্টল মালিক খাইরুল ভূঁইয়া বলেন, আমাদের বেচাকেনা বেশ ভালো হয়েছে। তবে মেলার স্টল বরাদ্দ নিতে টাকা লেগেছে তিনগুণ বেশি। তাই বেশি লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না। সামনে যাতে ব্যবসায়ীরা সরাসরি স্টল বরাদ্দ নিতে পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে কর্তৃপক্ষের। তাহলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে বলে আশা করছি। ব্যবসায়ীরা আবদেন করলেও বাড়ানো হয়নি এবারের বাণিজ্য মেলার সময়সীমা।
এবারের বাণিজ্য মেলায় ১০টি দেশের ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। মেলায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৭টি প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টল রয়েছে। এছাড়া দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি হলের বাইরে মিলে মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। মেলা চলছে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
এর আগে ২৪ জানুয়ারি ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে সময়সীমা বাড়ানোর জন্য লিখিত আবেদন জানান।
চিঠিতে বলা হয়েছিল, বিভিন্ন কারণে মেলায় বরাদ্দ নেওয়া স্টল তৈরি করতে সাত দিনের বেশি সময় লেগেছে। কারণ শৈত্যপ্রবাহের জন্য রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি ও বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির সংকট ছিল। সুতরাং স্টল সাজিয়ে ব্যবসা শুরু করতে সাত দিন সময় পেরিয়ে গেছে। ফলে মেলার সময় না বাড়ানো হলে তারা লোকসানে পড়বেন বলে উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
চলতি মাসে টঙ্গীতে দুই দফায় ইজতেমা হওয়ার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, এতে দুইবার তিন দিন করে মোট ছয় দিন রাস্তায় প্রচ- যানজট ছিল। যার কারণে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি কম ছিল। চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, পূর্বাচল ৩০০ ফুট মহাসড়কে এক দিন ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মেলায় উপস্থিতি কম ছিল।
তবে মেলার আয়োজক সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ বলেন, এবার মেলার সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
গত ১ জানুয়ারি টানা দ্বিতীয়বারের মতো রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে (বিবিসিএফইসি) ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আসর বসে। ২৭তম বাণিজ্য মেলার এ আসরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রসঙ্গত, দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন, উৎপাদনে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।