ডেস্ক রিপোর্ট

  ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আইএমএফ’র ঋণ অনুমোদন, কী বলবেন রেজা কিবরিয়ারা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) এ অনুমোদন দেয় আন্তর্জাতিক ঋণদান প্রতিষ্ঠানটি। ঋণ পাওয়া নিয়ে দোটানায় ছিলেন অর্থনীতিবিদরা। দুর্নীতির তকমা দিয়ে বিরোধীরা বলেছিলেন, ঋণ পাওয়া যাবে না। সরকার সেখান থেকে ঋণ পাবে না। পরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই ঋণ দিতে রাজি হয় আইএমএফ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আইএমএফ এর শর্ত মেনে এখন সরকারকে বাজেট ঘাটতি ধারণযোগ্য পর্যায়ে রাখতে হবে। মুদ্রা বিনিময় আরও নমনীয় করতে হবে।

বাংলাদেশ এর আগে আইএমএফ'র কাছে ঋণ চেয়েছিল ১০ বার। প্রথমবার ঋণ নিয়েছিল ১৯৭৪ সালে। ঋণের জন্য সংস্থাটির কাছে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি গিয়েছে ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯০ সালে। ১০ বছরে বাংলাদেশ আইএমএফ’র কাছ থেকে পাঁচ বার অর্থ ঋণ করেছে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দেশটিতে সামরিক শাসন থাকায় তেমন কোনো অর্থনৈতিক সংস্কারও হয়নি। ফলে যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই আইএমএফ এর দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ।

আইএমএফের ঋণের দরকার নেই বলে এখন কেন সরকার আইএমএফ থেকে ঋণ নিচ্ছে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আইএমএফের কাছ থেকে লোন পেয়ে ডুগডুগি বাজাচ্ছেন। কিছুদিন আগে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের আইএমএফের লোনের দরকার নেই। তবে এখন আইএমএফের লোন নিচ্ছেন কেন?’ গত বছরের ১০ নভেম্বর তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেছেন, লোন নিয়েছেন ভালো কথা, কিন্তু পরিশোধ করবেন কী করে?’ তিনি দাবি করেন, চুরি করে, দুর্নীতি করে, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে সরকার দেশকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই রিজার্ভ খালি হয়ে গেছে। এ জন্যই সরকার আইএমএফ থেকে ঋণ নিচ্ছে। এই ঋণ শোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

গণঅধিকার পরিষদ নেতা ড. রেজা কিবরিয়া বলেছেন, দেশের ব্যাংকিং খাত গভীরভাবে দুর্নীতিতে জড়িত; সুতরাং ঋণ পাওয়াও সম্ভবনয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মামার বাড়ি নয়। চাইলেই সরকার ঋণ পাবে এমন নয়। সরকার সেখান থেকে ঋণ পাবে না। গত বছরের ৮ আগস্ট তিনি এসব কথা বলেন।

গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ঋণ নিয়ে সরকার দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছে। ঋণের ভারে জর্জরিত করে আজকে দেশকে দেউলিয়াত্বের পথে নিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের ২৯ জুলাই তিনি এসব কথা বলেন।

আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনায় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তারা বলেছে, এই ঋণ মানুষের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলবে। গত বছরের ৩ নভেম্বর জোট নেতারা এসব কথা বলেন।

সভায় বক্তারা আরও বলেন, বিদেশি ঋণের নামে হাজারটা শর্ত প্রতিনিয়ত আরোপ করা হচ্ছে জনগণের ওপর। কিন্তু সরকার কখনোই এসব ঋণ নেয়ার সময় শর্তগুলো জনসম্মুখে আনে না। অবিলম্বে সকল বিদেশি ঋণের শর্ত জনসম্মুখে আনতে হবে।

গত ১৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পরিশোধের ক্ষমতা আছে বলেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে। তিনি বলেন, আইএমএফ কেবল তখনই (যে কোনো দেশকে) ঋণ দেয় যখন দেশটি ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা অর্জন করে। আমরাতো তেমন কোনো শর্ত দিয়ে ঋণ (আইএমএফ থেকে) নিচ্ছি না।

ঋণ অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে এক বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছিলেন যে, আইএমএফ হয়তবা এ ঋণ দেবে না। তারা ভেবেছিল আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাসমূহ দুর্বল, তাই আইএমএফ এ ঋণ প্রদান থেকে বিরত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, এ ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে এটাও প্রমাণিত হলো যে, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাসমূহ শক্ত ভিতের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে এবং অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো। ঋণ অনুমোদনের প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আমরা অবশ্যই আইএমএফের প্রতি এই ঋণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

গত বছরের ১১ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি আইএমএফের ঋণ নিয়েও রাজনীতি করছে বলে মন্তব্য করছেন ।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব এমন তলানিতে ঠেকেছে যে, তারা এখন আইএমএফের ঋণ নিয়েও রাজনীতি করছে। কিছুদিন আগে আইএমএফ যাতে ঋণ না দেয় সে জন্য তারা ষড়যন্ত্র করেছে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে মিথ্যা ও মনগড়া তথ্য উপস্থাপন করেছে। আবার আইএমএফ যখন ঋণ দিচ্ছে তখন তারা বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করছে।

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বিবিসি বাংলাকে আইএমএফ প্রসঙ্গে বলছেন, কোনো কারণে সরকার টাকা নিয়ে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে বা যেসব উদ্দেশ্যে টাকা দেয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে না পারলে সংস্থাটি টাকা দেয়া বন্ধ করে দিতে পারে।

এইচ মনসুর বলেন, এজন্যই ছয় মাস পর পর তারা পর্যালোচনা করে দেখবে বাংলাদেশ সংস্কার কর্মসূচি ঠিক মতো বাস্তবায়ন করতে পারছে কি-না এবং করলে তার ফলে দেশের অর্থনীতির উন্নতি হচ্ছে কি-না। প্রতিবার পর্যালোচনা করেই তারা কিস্তির টাকা ছাড় দেবে।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ঋণের টাকা বাংলাদেশ কিভাবে ব্যবহার করবে সেটি বিস্তারিতভাবে সব বলা থাকবে এবং সময়সূচী ও লক্ষ্যমাত্রাগুলো সেখানে উল্লেখ থাকবে। অর্থাৎ রাজস্ব ব্যয় বাড়ানো, ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, বিনিয়োগ বাড়ানো কিংবা ভর্তুকি কমানোর মতো যেসব শর্ত আইএমএফ দিয়েছে সেখানে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হবে।

তিনি বলেছেন, টাকা দেয়ার আগে এটিই ঋণদাতাকে আশ্বস্ত করতে হবে যে সরকার সংস্কারে রাজি হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি কিস্তি পাওয়ার জন্য আগেই সরকারকে অগ্রগতিগুলোও জানাতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, মেগা প্রকল্পে ‘নিয়ম বহির্ভূতভাবে’ রিজার্ভের অর্থ খরচ করে সরকার এখন তার ‘হিসাব দিতে পারছে না’।

গত বছরের ৮ নভেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ বলেন, কেন আমাদের আজকে রিজার্ভ নেই? কেন রিজার্ভের হিসাব এই সরকার আইএমএফকে দিতে পারছে না? কেননা সারা পৃথিবীতে নিয়ম নেই যে- রিজার্ভ থেকে নিজের দেশের অভ্যন্তরে মেগা প্রজেক্টে ঋণ দেওয়া। তারা (সরকার) ঋণ দিয়েছে।

১৬ জানুয়ারি তিনি বলেন, আজকে ব্যাংকে ভোক্তা পর্যায়ে সুদের হার বৃদ্ধি করে তারা (সরকার) আইএমএফকে খুশি করতে চায়। কিন্তু আইএমএফ বলেছে তারা খুশি নয়, তারা আরও সংস্কার দেখতে চায়। তার অর্থ হচ্ছে আজকে আইএমএফ-ও বুঝতে পেরেছে যে এই বাংলাদেশের টাকা বিদেশে চলে গেছে। যার জন্য আজকে ডলারের সংকট, ব্যাংকগুলোতে তারল্যের সংকট। সরকার কোনো রকমে আর ধামাচাপা দিতে পারছে না।

এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি সাড়ে চারশ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ ঢাকায় আসেন। পাঁচ দিনের সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন।

পিডিএস/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আইএমএফ,রেজা কিবরিয়া,মির্জা ফখরুল,ভিপি নূর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close