নিজস্ব প্রতিবেদক ও খুলনা ব্যুরো

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ : চিংড়ি রপ্তানিতে ধস, বদলাচ্ছে পেশা 

ছবি : সংগৃহীত

হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি বেশ কয়েক বছর পর আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিল। গেল ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ২৯ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়েছিল, যা দেশি মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে)। এই আয় তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি। আগের ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে রপ্তানি হয়েছিল ২১ কোটি ডলার বা ১ হাজার ৮০৬ কোটি টাকার হিমায়িত চিংড়ি। কিন্তু এই সুখবর বেশি দিন টেকেনি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চিংড়ি রপ্তানির পাল ফুটো করে দিয়েছে। এতে আশার তরী আবার থেমে গেছে। অনেক ব্যবসায়ী লাভ নিয়ে তীরে ভিড়তে পারেননি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের দেশগুলোতে চিংড়ি রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে; ধস নামিয়েছে দামেও। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পেশা বদল করছেন চিংড়ি ব্যবসায়ীরা।

রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিংড়ি রপ্তানি বন্ধ ছিল। তখন থেকে চিংড়ি ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। করোনার সংক্রমণ কমলে ২০২১ সালের মার্চ থেকে রপ্তানি শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে আশার আলো দেখেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে চিংড়ি রপ্তানিতে আবারও মন্দা দেখা দেয়। রপ্তানি সচল থাকলেও ইউরোপের দেশগুলোতে কমেছে চিংড়ির দাম। রপ্তানি ও চিংড়ির দাম কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাত মাস ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনে চিংড়ি রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে রপ্তানি ও দাম কমেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

খুলনা জেলার মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে রাশিয়ায় রপ্তানি হয়েছিল ৭৩১ টন চিংড়ি। যার দাম পড়েছিল ৫৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রপ্তানি হয় ২৪০ টন, যার দাম ২০ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

২০২০-২১ অর্থবছরে ইউক্রেনে রপ্তানি হয়েছিল ১১৯ টন চিংড়ি। যার দাম ১১ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ২৯ টন, যার দাম ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। তবে দুটি দেশেই ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকে চিংড়ি রপ্তানি হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সহসভাপতি হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে রাশিয়া ও ইউক্রেনে চিংড়ি রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। করোনার মন্দা ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে এখন যুদ্ধের ধকল চলছে। চিংড়ির ওপর ধারাবাহিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব চলছে। ফলে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা ভালো নেই। লোকসানের মুখে অনেকে চিংড়ি চাষ ছেড়ে অন্য মাছ চাষ করছেন। অনেকে মূলধন হারিয়ে জীবিকার জন্য পেশা বদলে ফেলেছেন।’

বিএফএফইএর পরিচালক মো. রেজাউল হক বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে ইউরোপের দেশগুলোর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সে কারণে ইউরোপে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি আগের তুলনায় কমেছে। দামও কমেছে। ফলে এই পেশার লোকজন লোকসানের মুখে রয়েছেন।’

খুলনা বিভাগীয় পোনা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পাইকগাছা উপজেলার পুরস্কারপ্রাপ্ত ঘের ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া রিপন বলেন, ‘একের পর এক মন্দার কারণে চিংড়িচাষিরা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। করোনার সংক্রমণ কমার পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। ফলে টানা সাত মাস ধরে রাশিয়া-ইউক্রেনে চিংড়ি রপ্তানি বন্ধ আছে। এতে চাষিরা সংকটে পড়েছেন। পোনার সংকট থাকায় উৎপাদনও কমেছে।’

খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপপরিচালক মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে চিংড়ি রপ্তানি খাতে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বাড়াতে তৎপর রয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। রপ্তানিকারকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন; সেদিকে খেয়াল রাখছি আমরা। তবে রপ্তানি পুরোদমে শুরু হলে সংকট কেটে যাবে।’

দেশে বর্তমানে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও ময়মনসিংহে চিংড়ি চাষ হয়। রপ্তানির জন্য ১০৫টি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কারখানা রয়েছে। এরমধ্যে ৭৬টি ইইউর অনুমোদন পাওয়া। ১০৫টি কারখানার বছরে ৪ লাখ টন চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত করার সক্ষমতা রয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ,চিংড়ি রপ্তানিতে ধস,বদলাচ্ছে পেশা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close