প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
দ. এশিয়ার ‘তেজদীপ্ত’ অর্থনীতি বাংলাদেশ
স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক শক্তি একটি মাইলফলক অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সুপারিশ করে। স্বাধীনতার মাত্র ৫০ বছরে এই উঠে আসাকে বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল (ডব্লিউএসজে)।
গত বুধবার পত্রিকাটির একটি নিবন্ধে বাংলাদেশকে ‘দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির ষাঁড়’ মন্তব্য করে দেশের অর্থনৈতিক তেজদীপ্ত অবস্থাকে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রমাগত রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ও সার্বিক অর্থনীতির তেজিভাবের কারণেই মূলত এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন প্রতিবেদক মাইক বার্ড।
‘বাংলাদেশ ইজ বিকামিং সাউথ এশিয়াস ইকোনমিক বুল কেস’ শিরোনামে ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভিয়েতনাম যেসব সফল উন্নয়ন মডেল আঁকড়ে বড় ধরনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন করেছে, সেদিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের নামও উল্লেখযোগ্য। স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে রপ্তানিমুখী উন্নয়ন বর্তমানে সবচেয়ে কার্যকর। আর বাংলাদেশে এ কাজটি হয়েছে খুব ভালোভাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক দশকে ডলারের হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। মূলত তৈরি পোশাক খাতের (আরএমজি) মাধ্যমে এ অগ্রগতি। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্প খাত। অন্যদিকে, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান রপ্তানিতে তুলনামূলক পিছিয়ে পড়েছে।
২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ভারতের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম। কিন্তু গত বছর ভারতকে ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। নভেল করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ভারতের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেওয়ায় এমনটা ঘটেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) অবশ্য পূর্বাভাস দিয়েছে, এই ব্যবধান কম-বেশি এমনই থাকবে।
বাংলাদেশের উন্নয়নের পেছনে আরো কিছু কারণ আছে বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের নিবন্ধে বলা হয়েছে। সেগুলো হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ তরুণ জনগোষ্ঠী, প্রতিযোগিতামূলক মজুরি, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় শ্রমবাজারে শক্তিশালী ও ক্রমবর্ধমান হারে নারীদের অংশগ্রহণ।
বাংলাদেশের এই উন্নয়ন ধারায় সম্ভাব্য কিছু বাধাও রয়েছে বলে নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কম। এই দুটি দেশের রপ্তানি গত ১০ বছরে যথাক্রমে তিনগুণ ও দ্বিগুণ হয়েছে। তবে ২০০০-এর দশকের প্রথম দিকে ভারতের রপ্তানি অনেক বাড়লেও একপর্যায়ে স্থবির হয়ে যায়। সুতরাং এটা মনে রাখতে হবে, ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার নিশ্চয়তা সবসময় থাকবে না।
নিবন্ধে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য এখন পরবর্তী ধাপ হবে উচ্চমূল্যে রপ্তানিপণ্য উৎপাদন, যেমনটা করেছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় এখন অতিমাত্রায় তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎপাদন সক্ষমতার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩ দেশের মধ্যে ১০৮তম। অথচ ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের অবস্থান এর চেয়ে ভালো ছিল। এ ছাড়া বাংলাদেশ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্য জোটগুলোর অন্তর্ভুক্ত নয়। বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান, রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনোমিক পার্টনারশিপ কিংবা কম্প্রিহেনসিভ অ্যান্ড প্রোগ্রেসিভ ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপের সদস্য নয়।
তাই বাংলাদেশকে আন্তঃএশিয়া সরবরাহ ব্যবস্থায় আরো বেশি যুক্ত হতে হবে। পূর্বাঞ্চলের প্রতিবেশীদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। আর এর জন্য বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী উৎপাদন খাতে আরো বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ দেশটির উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেই ধরে নেওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় যারা উন্নয়নে ভিন্ন পথ অবলম্বন করছে, তাদের জন্য এটা সতর্কবার্তা।
পিডিএসও/হেলাল