ইমন হাসান

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

নিজেদের মর্জি মতো দামেই বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা

ভোজ্যতেলের নির্ধারিত দাম শুধুই কাগজে

বাজারে তদারকি বাড়ানোর তাগিদ বিশ্লেষকদের

বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভোজ্যতেলের দাম সরকারিভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা একেবারেই মানা হচ্ছে না। আগের বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বাড়তি দামে কেনার কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। তবে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুধু দাম নির্ধারণ করে দিলেই হবে না, কঠোরভাবে বাজার তদারকিও করতে হবে।

রাজধানীর কারওয়ানবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১২৫ থেকে ১২৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এটি সরকারিভাবে বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ১০-১৫ টাকা বেশি। পাম অয়েল (সুপার) বিক্রি হয়েছে লিটারপ্রতি ১১০ টাকা, যা নির্ধারিত দামের চেয়ে ৬ টাকা বেশি। এছাড়া বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩৫ টাকা নির্ধারিত হলেও বিক্রি হয়েছে বাড়তি দামে।

এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ওয়েবসাইটেও দেখা যায়, ভোজ্যতেলের বাজার মূল্যের কোনো হেরফের হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার এবং আগের দিন বুধবার দাম একই দেখা গেছে। টিসিবির বাজার তালিকায় দেখা যায়, গতকাল সয়াবিন তেল (লুজ বা খোলা) বিক্রি হয়েছে ১১৬-১২০ টাকা লিটার। সয়াবিন তেল (বোতল) এক লিটার (১৩০-১৪০) এবং ৫ লিটার ৫৮০-৬৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া পাম অয়েল (সুপার) লিটারপ্রতি ১০৫-১০৭ টাকা এবং পাম অয়েল (লুজ) ১০২-১০৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। দাম বাড়ার প্রতিক্রিয়া নিয়ে এক ক্রেতা বলেন, ‘সরকার বাড়তি দামই নির্ধারণ করে দিয়েছে। এখানে সাধারণ মানুষের কোনো লাভ নেই। সব লাভ ব্যবসায়ীদের। আর যে দাম সরকার নির্ধারণ করল সেই দামেও বিক্রি করছে না ব্যবসায়ীরা। সরকার দাম নির্ধারণ করেই কাজ শেষ করেছে। বাজার মনিটরিংয়ের কোনো প্রদক্ষেপই দেখছি না।’

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশের বাজারের তুলনা করলেই দামের পার্থক্য বোঝা যাবে। সরকারের উচিত অশুভ উদ্দেশে ব্যবসায়ীরা তেল মজুদ করছে কি না তা খতিয়ে দেখা। আর মনিটরিং আরো জোরদার করতে হবে। এমনিতেই করোনার কারণে অনেক মানুষ চাকরি হারিয়েছে, বেতন-ভাতা, আয় কমে গেছে। এ অবস্থায় নিত্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে মানুষ আরো বিপাকে পড়বে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়তি। সেটার প্রভাব পড়েছে বাজারে। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে যেন ব্যবসায়ীরা নতুন করে দাম বাড়াতে না পারে। এক্ষেত্রে সরকারকে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে, যেন ব্যবসায়ীরা মজুদ না করে।’

কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী সেলিম উদ্দিন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, পূর্বনির্ধারিত দামে তেল কিনে আনায় বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে ভোজ্যতেল। মানভেদে প্রতি লিটার ভোজ্যতেল সরকারি দামের চেয়ে ৫ থেকে ২০ টাকা বাড়তি।

আরেক ব্যবসায়ী শাহআলম বলেন, ‘গত দুই দিনে তেলের দাম অনেক বেড়েছে। সকালে এক দাম, বিকালে এক দফা বেড়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। সয়াবিনের দাম বাড়ার কারণে তেলের দাম বাড়ছে। সরকারকে সয়াবিনের বাজার ও মেইল মালিকদের করতে হবে। কারণ সেখানে দাম বাড়লে আমাদেরও দাম বাড়াতে হবে।’

গত বুধবার সচিবালয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশনবিষয়ক জাতীয় কমিটির সভায় ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে ঘোষণা দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি। তিনি বলেন, প্রতি লিটার সয়াবিন (খোলা) মিল গেটে ১০৭ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন মিল গেট মূল্য ১২৩ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১২৭ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১৩৫ টাকা। ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন মিল গেট মূল্য ৫৮৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৬০০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ৬২৫ টাকা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভোজ্যতেল,বাণিজ্য,বাজার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close