গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৪ জানুয়ারি, ২০২১

চট্টগ্রাম বন্দর বদলে যাবে ৬ প্রকল্পে

গতি আসবে ব্যবসা বাণিজ্যে

চট্টগ্রাম বন্দরকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে চলছে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার। চলমান এসব উন্নয়ন কার্যক্রম শেষ হলে বদলে যাবে বন্দরটির চিত্র। ব্যবসা-বাণিজ্যে আসবে আরো গতি। বেগবান হবে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। এতে লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম বন্দর ও সরকারি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সংস্কার ও আধুনিকায়নে ছয়টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এগুলো হচ্ছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ (পিসিটি), কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত ড্রেজিং প্রকল্প, সার্ভিস জেটি স্থানান্তর ও পুনর্নির্মাণ, দুইটি ৭০ টন বোলার্ড পুল টাগ বোট ক্রয়, মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (এমপিডিপি) এবং বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড এবং টার্মিনালের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রকল্প। চট্টগ্রাম বন্দরের সংস্কার উন্নয়ন সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায় আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

সরকারি নথির তথ্য মতে, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে। ২০২০ সালে ১০ মার্চ একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। আর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয় গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর। প্রতিষ্ঠানটি গত ৩ নভেম্বর কাজ শুরু করে। আর আনুষ্ঠানিক প্রকল্পের কাজ শুরু হয় গত ১৬ নভেম্বর থেকে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২৬ সালের মধ্যে বন্দরের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। তবে ২০২৫ সালের মাঝামাঝিতে এ টার্মিনালে কাজ শুরু হতে পারে। নভেল করোনাভাইরাসের বর্তমান সংক্রমণের মধ্যেই পরামর্শকরা কাজ করছেন, যা ইতিবাচক দিক। সংশ্লিষ্টরা আরো বলেন, ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছে। ৪৬০ মিটার লম্বা জেটি করা হচ্ছে। নদীপথ যুক্ত আছে। পরে সড়ক ও রেলপথ যুক্ত হবে। বড় জাহাজে কনটেইনার আসলে খরচ কমে যাবে, ব্যবসায়ীরা আকৃষ্ট হবেন, তারা লাভবান হবেন। ২০২৬ সালের মধ্যে সড়ক যোগাযোগের কাজ শেষ হবে। একটি বন্দরের অধীনে অনেক টার্মিনাল বন্দর থাকতে পারে। মাতারবাড়ী পোর্ট চট্টগ্রাম বন্দরের সীমার মধ্যে রয়েছে।

সূত্র মতে, মাতারবাড়ী বন্দরের ফিজিবিলিটি ও ফ্রি ফিজিবিলিটি স্টাডি জাপানের অর্থায়নে হচ্ছে। এ খাতে সরকারকে কোনো পয়সা ব্যয় করতে হচ্ছে না। পরামর্শ খাতের ব্যয় নির্বাহ হচ্ছে বন্দরের তহবিল থেকে। এর জন্য জাইকা থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে। দশমিক ০১ শতাংশ সুদে, ২০ বছর পর এটি শোধ করতে হবে।

এ কনসালটেন্সিতে ২৩৪ কোটি টাকা খরচ হবে। এখন থেকে শুরু করে ২০২৬ সাল পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি। এখানে ডিজাইন, সুপারভিশন, মনিটরিং, টেন্ডারে সহায়তা এবং পরবর্তী ওয়ারেন্টি পিরিয়ডও অন্তর্ভুক্ত। এ প্রকল্পের ২৬ কিলোমিটার রাস্তাসহ মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণে খরচ হবে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। ৮ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা শুধু বন্দরের জন্য। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃৃপক্ষ দিচ্ছে ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা।

আর পিসিটির উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৭ সালের জুলাইয়ে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হবে। এ প্রকল্পের পূর্ত কাজে অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ। পিসিটি টার্মিনালটির কাজ শেষ হলে বেসরকারি অপারেটরদের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হবে।

পণ্যবাহী জাহাজগুলো নির্বিঘ্নে বন্দরে যাতে ভিড়তে পারে সেজন্য সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৩৫ দশমিক ২০ শতাংশ হলেও বাস্তব অগ্রগতি ২৫ শতাংশ। বর্তমানে ৪০০ মিটার জেটি ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গ্র্যাব ড্রেজারের মাধ্যমে সীমিত আকারে ড্রেজিং কাজ চলমান আছে।

আর সার্ভিস জেটি স্থানান্তর ও পুনর্নির্মাণ কাজটি শুরু হয় ২০১৫ সালের জুলাইয়ে এবং গত ডিসেম্বরে শেষ হয় এ প্রকল্পের কাজ। শিগগিরই জাহাজ চলাচল শুরু হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে আগত জাহাজগুলো সহযোগিতা প্রদানের জন্য নিজস্ব নৌবহর কান্ডারি টাগবোট, স্প্রিডবোট, বার্জ, ড্রেজার, পাইলট ভেসেল, সিকিউরিটি বোর্ড ইত্যাদি অতিরিক্ত সুবিধা প্রদানের জন্য এ জেটি নির্মাণ করা হয়েছে।

বোলার্ড পুল টাগবোট ক্রয় প্রকল্পটি চলতি বছর শেষ হবে। এটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের অধীন দুইটি ৭০ টন বোলার্ড পুল টাগ বোট কেনা হচ্ছে। এ বোট কেনা শেষ হলে বন্দরের বার্তা আদান-প্রদান কাজে গতি বাড়বে।

বন্দরের কাজকে আরো গতিশীল করার জন্য ১৭ ধরনের ১০৪টি যন্ত্রপাতি কেনার লক্ষ্যে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয় ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে। আগামী ২০২২ সালে প্রকল্পটি শেষ হবে। প্রকল্পের যন্ত্রাংশের মধ্যে কি গ্যান্ট্রি ক্রেন, রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি), স্ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার (৪ হাই), স্ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার (২হাই), রিচ স্টেকার, কনটেইনার মোভার, ভেরিয়েবল রিচ ট্রাক (৪০-৪৫ টন), মোবাইল ক্রেন (১০০ টান), মোবাইল ক্রেন (৫০ টান), মোবাইল ক্রেন (৩০ টান), মোবাইল ক্রেন (২০ টান), মোবাইল ক্রেন (১০ টান), লগ হ্যান্ডলার ও স্টেকার, ফর্কলিফট ট্রাক (২০ টন), ম্যাটেরিয়াল মাল্টি হ্যান্ডলার (৩৫ টন) ও লো-বেড ট্রেইলার এবং হেভি ট্রাক্টর।

জানতে চাইলে বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য ও যুগ্ম সচিব মো. জাফর আলম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, প্রত্যেকটি প্রকল্পই বন্দরের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প শেষ হলে বন্দরের এরিয়া বাড়বে। আর জেটি স্থানান্তর ও পুনর্নির্মাণে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজে গতিশীলতা আসবে। কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা বাড়ানো হলে জাহাজগুলো নির্বিঘ্নে বন্দরে ভিড়তে পারবে এবং বের হতে পারবে। জাহাজজট কমবে। আর টাগবোট কেনা হলে বন্দরের ডাক পরিবহনে গতিশীলতা বাড়বে। দ্রুত তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে আধুনিক বন্দরগুলো যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সেগুলো যোগ হবে। এতে বন্দরের সুনাম বাড়বে। আর যন্ত্রপাতি কেনা হলে বন্দরের কার্যক্রম সহজ হয়ে দ্রুত পণ্য খালাস হবে, জাহাজীকরণ হবে। তিনি আরো বলেন, সব প্রকল্প শেষ হলে চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রকল্প,চট্টগ্রাম বন্দর,উন্নয়ন,বাণিজ্য
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close