হাসান ইমন

  ২৭ জুলাই, ২০২০

পশুর হাটে ক্রেতা কম, ভাবনায় বিক্রেতারা

সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীতে আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বসছে ১৭টি পশুর হাট। যদিও এরই মধ্যে পশুর হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু, ছাগল, মহিষ চলে এসেছে। তবে এখনো জমে ওঠেনি হাট, ক্রেতা-বিক্রেতারা দরদামই ব্যস্ত রয়েছেন। গতকাল রোববার মেরাদিয়া, আফতাবনগর ও আমুলিয়া মডেল টাউন হাটে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এসব হাটের ব্যাপারীরা বলেন, হাটে এখনো ক্রেতা কম, দর্শনার্থী বেশি। করোনা পরিস্থিতির কারণে ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৭টি পশুর হাট বসেছে। ঈদের আর চার দিন বাকি থাকলেও জমে ওঠেনি পশুর হাট। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খামারি ও ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশু নিয়ে এই হাটে এলেও ক্রেতার দেখা মিলছে না। করোনা ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে দামও পড়তি। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, আগামী দু-এক দিনের মধ্যে বাড়বে ক্রেতা সমাগম।

রাজধানীর পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে এরই মধ্যে রাজধানীর অস্থায়ী হাটগুলোতে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খামারিরা তাদের পালিত গরু-ছাগল নিয়ে হাটে আসছেন। তারা বলেন, দু-এক দিনের মধ্যেই পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে হাটগুলো। এখনো তেমন বেচাবিক্রি শুরু হয়নি। ক্রেতারা শুধু হাট ঘুরে ঘুরে পশু দেখছেন, কেউ কেউ দরদামও করছেন। উট, দুম্বা, বড় ও দামি গরুরও খোঁজ নিচ্ছেন কেউ কেউ। অনেকে এসে জানতে চান, বড় গরু কোথায় আছে। তাদের এ আগ্রহ মূলত পশু দেখার জন্য, কেনার জন্য নয়। গতকাল সরেজমিনে আফতাবনগর (ইস্টার্ন হাউজিং) হাটে দেখা যায়, রাস্তার দুই ধারে ত্রিপল পেতে গরু নিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের বেশির ভাগই রাজধানীর বাইরের বিক্রেতা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হাটের পরিবেশ ভালো। কিন্তু এখনো পর্যাপ্ত পানি ও আলোর ব্যবস্থা করা হয়নি। প্রবেশমুখে রাস্তার পারের বেহালদশা।

পাবনার থেকে ১২টি গরু নিয়ে এসেছেন কেরামত মিয়া। ৮০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকার গরু রয়েছে তার। কয়েকজন ক্রেতা এলেও নামমাত্র দরদাম করেই চলে গেছেন। কাক্সিক্ষত দর পেলে গরু ছেড়ে দেব। তিনি বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) সকালে আইছি, এখনো তেমন কেউ আইল না গরু কিনতে। এবারে হাটে এখন পর্যন্ত তেমন গরু আসেনি। গতবারের চেয়ে এবার অর্ধেক এসেছে গরু। এখন পর্যন্ত দাম কেমন হবে বলা যাচ্ছে না। তবে আশার রারাজধানীখি ভালো হবে। সিরাজগঞ্জ থেকে ১৭টি গরু নিয়ে আসা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যা বুঝতাছি, এবার গরুর ব্যবসা হইব না। যে গরুর দাম এলাকার মানুষ কইত এক লাখ টাকা, এখানে দাম কয় ৭০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত হাটে মানুষ কম। যারা আইতাছে গরু দেখতাছে। কেনার জন্য মানুষ আইব আরো পরে। এই টাকায় বিক্রি করলে খরচই উঠব না।’

মেরাদিয়া হাটে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশজুড়ে সারি সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে গরু। এছাড়া আবাসিক এলাকার রাস্তার দুই পাশে এবং বাসাবাড়ির সামনে পশু বেঁধে রাখতে দেখা গেছে। এই হাটে গত বছরের তুলনায় এবার অনেক পশু কম এসেছে জানিয়েছেন ব্যাপারীরা। তবে এই হাটে সুযোগ-সুবিধা কম বলেও জানান তারা।

এ বিষয়ে হাট ইজারাদার ময়েন উদ্দিন মিলন বলেন, হাটের প্রস্তুতির কাজ এখনো চলছে। স্বাস্থ্যবিধির যে নিয়মগুলো দেওয়া হয়েছে সব মানা হবে। এছাড়া ব্যাপারীদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে দেখা হচ্ছে।

মেরাদিয়া হাটে বগুড়ার নন্দীগ্রাম থেকে চারটি গরু নিয়ে এসেছেন বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখনো হাট জমেনি। আগামী মঙ্গল-বুধবার থেকে জমতে পারে। তবে ব্যবসা খুব একটা হবে না।’ চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ী তাহের বলেন, ‘সকাল থেকে বসে আছি। এখনো কেউ গরুর দাম জিজ্ঞেস করেনি। সামনের দিনগুলোতে ক্রেতা বাড়তে পারে।

আমুলিয়া মডেল টাউনের অস্থায়ী পশুর হাটে গতকাল দুপুর পর্যন্ত সহস্রাধিক গরু উঠলেও বিক্রি হয়েছে মাত্র পাঁচটি। এই হাটে কুষ্টিয়া থেকে সাতটি গরু নিয়ে এসেছেন মিজারুল ইসলাম। এর মধ্যে গতকাল ১ লাখ ১৭ হাজার টাকায় একটি গরু বিক্রি করেন তিনি। গতকাল দুপুরে কথা হয় চকবাজারের ব্যবসায়ী ওমর ফারুকের সঙ্গে। তিনি জানান মাঝারি সাইজের একটি গরু খোঁজছেন। পছন্দ হলেল কিনবেন। তবে ব্যাপারীরা তুলনামূলক বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন। তাই একটু যাচাই-বাছাই করছেন।

হাটের ইজারাদার প্রতিনিধি সাদ জানান, সারা দিন অনেকেই আসেন। বেশির ভাগই গরু দেখে চলে যাচ্ছেন। অনেকেরই বাসায় গরু রাখার জায়গা নেই। তাই ঈদের এক-দুই দিন আগে বেচাকেনার ধুম পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পশুর হাট,কোরবানি,রাজধানী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close