
শিশুদের টিকাদান শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে

টিকাদান কার্যক্রমের মাধ্যমে ভ্যাকসিন প্রতিরোধযোগ্য রোগ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের যথেষ্ট অগ্রগতি ও অর্জন রয়েছে। তবে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) মাধ্যমে দেশে টিকাদান অব্যাহত থাকলেও কোনোভাবেই ইপিআই কাভারেজ ৮৪ শতাংশের ওপরে উঠতে পারছে না। ফলে এখনো দেশের ১৬ শতাংশের বেশি শিশু টিকাসুবিধা থেকে বঞ্চিত। এমনকি এ কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি অবহেলা দেখা গেছে শহরকেন্দ্রিক টিকাদানে। গত সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন ও ইউনিসেফ বাংলাদেশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার এ তথ্য তুলে ধরেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ১৯৮৪ সালে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কভারেজ ছিল ২ শতাংশের নিচে, যা বর্তমানে ৮৩ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে গ্রাম-শহর নির্বিশেষে এ কাভারেজে ব্যাপক ভিন্নতা রয়েছে। টিকা কর্মসূচিতে শহরকেন্দ্রিক কার্যক্রমে ব্যাপক অবহেলা দেখা গেছে। কার্যক্রম থাকলেও উন্নতি না থাকার প্রধান কারণে হিসেবে জনবলের ঘাটতির কথা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, দেশে ইপিআই কর্মসূচির অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে টিকা কার্যক্রমে জনবলের ঘাটতি। এছাড়া অঞ্চলভিত্তিক টিকাকেন্দ্রের অসম বণ্টন, অপর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, টিকার অপর্যাপ্ততা, টিকাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণের অভাব, দুর্গম এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টিকা পরিবহনজনিত সমস্যা, টিকাদান সম্পর্কিত প্রচারণার অভাবসহ রয়েছে নানা সমস্যা। অন্যদিকে, মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ পদ এবং ইপিআই সদর দপ্তরে ৪৩ শতাংশ পদ এখনো শূন্য রয়েছে। এছাড়া বরাদ্দকৃত জনসংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম, কারণ আরবান ইমিউনাইজেশন স্ট্র্যাটেজি-২০১৯ এবং ইপিআই মাইক্রোপ্ল্যান-২০২৪ অনুসারে প্রতি ৫০ হাজার জনসংখ্যার জন্য ছয়জন টিকাদানকর্মী প্রয়োজন, যা বাংলাদেশে এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।
বলা বাহুল্য, আগামী ২০২৯ সালের পর গ্যাভি টিকাদান প্রকল্পে সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে সরকারকে নিজস্ব অর্থায়নে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে। ইপিআইর সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে অক্টোবর ২০২৪ সাল পর্যন্ত টিকায় বাজেট বরাদ্দ থাকলেও বিশেষ কিছু এন্টিজেন যেমন পিসিভি, ওপিভি এবং এমআর টিকার সংকট দেখা যাচ্ছে। টিকাদান কর্মীদের নিয়োগের পর টিকাদান বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও রিফ্রেসার প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে টিকাদানকেন্দ্র পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের অভাব রয়েছে। দুর্গম এবং উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টিকা পরিবহন একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে পাহাড়ি, হাওর এবং নদীতীরবর্তী এলাকায় যানবাহনের সমস্যা থাকায় সঠিক সময়ে টিকাদান কেন্দ্রে টিকা পরিবহন সহজ হয় না। বস্তিবাসী, ভাসমান জনগোষ্ঠী, পাহাড়ি, হাওর এবং নদীতীরবর্তী এলাকায় টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা অজানা থাকায় জিরো ডোজ এবং মিসড ডোজ শিশুদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
গবেষণার প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির উচ্চ কাভারেজ নিশ্চিতের জন্য সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দ করা জনবলের মধ্যে যে শূন্যপদ আছে সেখানে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া; জনসংখ্যাভিত্তিক জনবলনীতি অভিযোজন করা; জনসংখ্যার ঘনত্বের ওপর ভিত্তি করে টিকাকেন্দ্রের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা; প্রতিটি টিকাদান কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা; ভ্যাকসিন সরবরাহ ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা; অদূর ভবিষ্যতে ভ্যাকসিনের যে সংকট দেখা দিতে পারে, সেক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। আমরা আশা করি, উল্লিখিত সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সরকারকে শিশুদের টিকাদান শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"