reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

জনভোগান্তি রোধে অবরোধ ও বিক্ষোভের বিকল্প ভাবতে হবে

রাজধানী ঢাকা প্রায় প্রতিদিনই নানা দাবি ও আন্দোলনে উত্তাল থাকে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় নাগরিকদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন ও বিক্ষোভ এক স্বীকৃত উপায়। তবে এসব আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট জনভোগান্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা সমাধানের দাবি রাখে।

গত রবিবারও রাজধানীর বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভের কারণে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে তিতুমীর কলেজের সামনে অবরোধ, জুলাই আন্দোলনে আহতদের পুনর্বাসনের দাবি এবং ইনকিলাব মঞ্চের বিক্ষোভ কর্মসূচি রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর কার্যকারিতা ব্যাহত করেছে। এতে অফিসগামী মানুষ, রোগী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন। যানজটের ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকার কারণে অফিসগামী মানুষের কর্মস্থলে পৌঁছাতে দেরি হয়, পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে যেতে পারেননি, এমনকি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীরা অসহনীয় কষ্টের সম্মুখীন হন। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা আদায়ের দাবিতে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে তারা আরো কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা অর্জনের জন্য আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। তারা সরকারকে চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে দাবি আদায়ে আরো কঠোর কর্মসূচি নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একইসঙ্গে আন্দোলনের অংশ হিসেবে অনশনরত শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে, যা উদ্বেগজনক। এক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে এবং আরো কয়েকজনের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে।

অন্যদিকে, গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা তাদের স্বীকৃতি ও পুনর্বাসনের দাবিতে মিরপুর এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তাদের দাবিগুলো অবশ্যই বিবেচনার দাবিদার, কারণ রাষ্ট্রের প্রতি তাদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। এ আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা স্বৈরাচারের পতন ঘটানোর জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, কিন্তু সরকার তাদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। তাদের অভিযোগ, আন্দোলন চলাকালীন তারা আহত হলেও সরকার তাদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি, বরং তাদের দাবিগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে তারা রাজপথে নেমে নিজেদের অধিকার পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন। একইভাবে ইনকিলাব মঞ্চের বিক্ষোভের কারণে সচিবালয়ের আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগসহ চার দফা দাবি উত্থাপন করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা এবং আন্দোলনকারীদের স্লোগান পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করে তোলে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন জনগণের দাবি উপেক্ষা করে রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করছে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। এ ধরনের বিক্ষোভ ও অবরোধ গণতন্ত্রের অংশ হলেও, নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ায় এর বিকল্প পথ খোঁজা জরুরি। আন্দোলনকারীদের উচিত তাদের দাবিগুলো সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সরকারের কাছে পৌঁছানো। অন্যদিকে সরকারকে অবশ্যই জনগণের ন্যায্য দাবি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে, যাতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো যায়।

গণতন্ত্র তখনই সঠিকভাবে কার্যকর হয়, যখন নাগরিকদের অধিকার রক্ষা হয় এবং একইসঙ্গে জনজীবনে স্বাভাবিক গতি বজায় থাকে। তাই আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান বের করে আন্দোলন ও নাগরিক ভোগান্তির মধ্যস্থল খোঁজা এখন সময়ের দাবি। সরকারকে অবশ্যই নীতি নির্ধারণ করতে হবে যাতে আন্দোলনকারীরা সংলাপে বসতে উৎসাহিত হন এবং একইসঙ্গে জনদুর্ভোগ এড়ানো যায়। অন্যথায় এ ধরনের আন্দোলন শুধু রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াবে এবং সাধারণ নাগরিকের দৈনন্দিন জীবনে অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close