
রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির শঙ্কা কাটবে কি?

রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জোগানে ব্যবসায়ীরা যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে স্বস্তির বিষয়। বিশেষ করে গত বছরের তুলনায় এবার পণ্যের মজুদ ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকার ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বেশকিছু নিত্যপণ্যে শুল্কছাড় দিয়েছে, যা বাজার স্থিতিশীল রাখতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি, আমদানিকারকদের উৎসাহ দিতে ডলারের সংকট অনেকটা কমানো হয়েছে, ফলে ফেব্রুয়ারিজুড়ে আরো পণ্য আমদানি হবে বলে আশা করা যায়। ব্যবসায়ীরা আশ্বস্ত করছেন, রমজানে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকবে।
তবে বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যায়। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও অনেক সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়, যা সাধারণ ভোক্তাদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পাইকারি ও খুচরা বাজারের দামের ব্যবধানও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও রমজান শুরু হলে কোনো কোনো ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে মূল্যবৃদ্ধি করতে পারেন। ফলে বাজার মনিটরিং জোরদার না করা হলে আগের মতো মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর ও ছোলার মতো পণ্যে দাম বাড়ানোর অপচেষ্টা প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, জানুয়ারি মাসে বিপুল পরিমাণ নিত্যপণ্য আমদানি করা হয়েছে এবং ফেব্রুয়ারিতে আরো আসবে, তারপরও এসব পণ্যের দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে থাকবে কি না, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) তথ্য অনুযায়ী, রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে প্রায় ৩ লাখ টন, অথচ জানুয়ারিতে এরই মধ্যে ৪ লাখ টন তেল আমদানি করা হয়েছে। চিনির চাহিদা যেখানে ৩ লাখ টন, সেখানে জানুয়ারিতেই ১ লাখ ৫৩ হাজার টন চিনি আমদানি করা হয়েছে এবং ফেব্রুয়ারিতেও আরো চিনি আসবে।
খেজুরের ক্ষেত্রেও আশার কথা শোনা যাচ্ছে। রমজানে খেজুরের চাহিদা প্রায় ৬০ হাজার টন, যার মধ্যে জানুয়ারিতেই এসেছে ২২ হাজার টন। ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে আরো খেজুর আসবে, ফলে সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই। সরকার শুল্কছাড় দেওয়ায় খেজুরের দামও কিছুটা কম থাকবে বলে আশা করা যায়। একইভাবে ছোলা ও ডালের সরবরাহও সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। তবে এসব ইতিবাচক দিক থাকা সত্ত্বেও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তিতে থাকার সুযোগ নেই। কারণ, রমজানের বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ হলো সরবরাহ ঠিক থাকলেও তার প্রতিফলন খুচরা দামে দেখা যায় না। ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজারে কম দামে পণ্য কিনলেও খুচরা বাজারে ক্রেতারা সেই সুবিধা পান না। এর মূল কারণ হলো বাজারে সিন্ডিকেটের সক্রিয়তা এবং তদারকির অভাব।
রমজানে পণ্যের জোগান স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি ইতিবাচক হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের তৎপরতা আরো বাড়ানো জরুরি। শুধু আমদানির পরিমাণ বাড়ালেই হবে না, সাধারণ ভোক্তারা যেন তার প্রকৃত সুবিধা পান, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর কঠোর মনিটরিং ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আমাদের প্রত্যাশা, এবারের রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং ক্রেতারা স্বস্তিতে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারবেন।
"