reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

পাঠ্যবই সংকট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক

নতুন বছরের প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার যে আনন্দঘন দৃশ্য আমরা প্রত্যক্ষ করি, নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়ায় সে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বছরের প্রথম মাস শেষ হলেও এখনো অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাদের প্রয়োজনীয় পাঠ্যবই হাতে পায়নি। এক-দুটি বই পেয়েও ক্লাস ঠিকমতো চলছে না, পাঠদান প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই বই না পাওয়ায় বিদ্যালয়ে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অনেক প্রতিষ্ঠানেই কেবল খেলার মাধ্যমে সময় কাটানোর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও কোথাও শিক্ষকরা পুরোনো বই বা পিডিএফ কপির মাধ্যমে পাঠদান চালিয়ে নিচ্ছেন, তবে এটি কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হতে পারে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি পাঠদানের মানেও ধস নামছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) দাবি করছে, ফেব্রুয়ারির মধ্যে বই সরবরাহের কাজ সম্পন্ন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ছাপানোর কাজ এবং বিতরণ প্রক্রিয়া নিয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পৌঁছানো নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। অনেক শিক্ষক ও অভিভাবকের অভিযোগ, একই জেলার অন্য উপজেলাগুলোতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী প্রয়োজনীয় বই হাতে পেয়েছে, অথচ হাতিয়ায় এখনো সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। এই বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি কেবল দুর্ভোগই সৃষ্টি করছে না, বরং এটি শিক্ষাগত সুযোগের ক্ষেত্রে এক অসমতার চিত্রও তুলে ধরছে।

প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বর্তমান সংকট আরো গভীর। হাতে গোনা কয়েকটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই পেলেও উচ্চতর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখনো পাঠ্যপুস্তকের অভাবে সঠিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে না। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে পুরোনো বইয়ের সাহায্য নিচ্ছেন, কোথাও কোথাও পিডিএফ কপি প্রিন্ট করে বিতরণ করা হচ্ছে। তবে এটি কোনো টেকসই সমাধান নয়। পড়াশোনার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই যথাসময়ে পৌঁছে দেওয়া অপরিহার্য।

একটি সুশৃঙ্খল ও কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে সরকারের উচিত বই বিতরণের ক্ষেত্রে সব অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সমান অগ্রাধিকার দেওয়া। বিশেষ করে, দ্বীপাঞ্চল বা দুর্গম এলাকার বিদ্যালয়গুলো যাতে সময়মতো বই পায়, সে জন্য আলাদা পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনসিটিবি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যতও অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। এ বিষয়ে প্রশাসনের গাফিলতি রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা জরুরি। পরিকল্পনার অভাব, ছাপার ধীরগতি এবং বিতরণব্যবস্থার অদক্ষতার কারণে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে হাতিয়ার মতো বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চলে সময়মতো পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা না থাকলে প্রতিবছরই একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এই মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী রাখতে হলে বই সংকটের মতো সমস্যাগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে এবং যথাযথ সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ যেন কোনো অব্যবস্থাপনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close