reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫

মূল্যস্ফীতি কমার অগ্রগতি জাতির জন্য সুখবর

খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি স্বল্প আয়ের মানুষকে বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলে, একথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। দেশের কিছু মানুষ দ্রুত ধনবান হলেও বৃহৎ অংশ দরিদ্র ও স্বল্প উপার্জনকারী ব্যক্তিদের কাতারেই রয়ে গেছে। করোনা মহামারির আগপর্যন্ত বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি কমবেশি ৫ শতাংশের মধ্যে ছিল। দুই বছর ধরে পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যেও সুখবর হচ্ছে, দেশে আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমার ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি হবে বলে আশাবাদী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপগুলো কার্যকর হচ্ছে না বলে সমালোচনা শুনেছি। বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোয়ও এসব পদক্ষেপ নেওয়ার পর সুফল পেতে ১০ থেকে ১২ মাস সময় লাগে। আশা করছি, আগামী জুনের মধ্যে বড় অগ্রগতি হবে।’

গত বুধবার ‘ডিজিটাল লেনদেনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা : প্রেক্ষিত ভ্যাট বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গভর্নর এসব কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাজস্ব খুব বাড়বে না- এমন মন্তব্য করে গভর্নর বলেন, এ খাতের সংস্কার দরকার। এ সংস্কার করতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে। বর্তমান সরকার সংস্কারের কাজটা শেষ করতে পারবে না, তবে শুরু করে দিয়ে যেতে পারবে। কর প্রশাসন ও করনীতি আলাদা করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে গভর্নর বলেন, এটা হওয়ার পর সারা বছর নীতি নিয়ে কাজ করা সম্ভব হবে। ব্যাংকে আমানত রাখলে ৩ হাজার টাকা করে কেন কেটে রাখা হবে- এমন প্রশ্ন তুলে এনবিআর চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে গভর্নর বলেন, এমন বিধান ব্যাংকে আমানত রাখতে মানুষকে নিরুৎসাহিত করে। গভর্নর বলেন, মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) বা ইন্টারনেট ব্যাংকিং, যাই বলি না কেন, একে জনপ্রিয় করতে স্মার্টফোন সস্তা করতে হবে। এমএফএস বা ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের ব্যবহারকারী বাড়লে করও বাড়বে। তিনি বলেন, বাংলা কিউআর কোড চালু করা হলেও জনপ্রিয় হয়নি। তার প্রশ্ন, একই ধরনের সেবায় ভারত পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না? অনলাইনে কর ও শুল্ক দেওয়ার ব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেন, এটা না করা গেলে রাজস্ব ব্যবস্থায় দুর্নীতি কমানো সম্ভব হবে না। গভর্নর মনে করেন, পণ্য আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রি পর্যন্ত ১০ শতাংশের বেশি ভ্যাট হওয়া উচিত নয়, যা বর্তমানে ১৫ শতাংশ। বলা বাহুল্য, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র পাকিস্তান ছাড়া অন্য সব দেশের মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের চেয়ে কম। ভারত, নেপাল ও ভুটানে মূল্যস্ফীতি যথাক্রমে ৮, ৮ দশমিক ৪ ও ৫ দশমিক ২ শতাংশ। পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ। আর শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। একইসঙ্গে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও ঘটেছিল। এক বছরের ব্যবধানে তারা মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে নিয়ে আসতে পারলে বাংলাদেশ কেন পারল না? এ নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য সরকারের নীতিনির্ধারকরা বৈশ্বিক কারণ দেখিয়ে থাকেন। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে খাদ্যপণ্যের দাম কতটা বেড়েছে, আর দেশি বাজারে কতটা বাড়ানো হয়েছে, সেটা পরখ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও কথিত সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যই দায়ী। সেক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি টিসিবির মাধ্যমে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে, আরো বেশিসংখ্যক মানুষকে সামাজিক সুরক্ষার অধীন নিয়ে আসতে হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close