reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

গ্যাস সংকট নিরসনে চাই কার্যকর পদক্ষেপ

ঢাকা মহানগরীর দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা গ্যাস সংকট। যা সাম্প্রতিক সময়ে আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাজধানীর মিরপুর, বাসাবো, রামপুরা, খিলগাঁও, বনশ্রী, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, উত্তরাসহ অনেক এলাকায় প্রতিদিনই গ্যাসের অভাব দেখা দিচ্ছে। দিনের বেশিরভাগ সময়ে গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় নগরবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সকাল ও সন্ধ্যায় গ্যাসের চাপ এতটাই কম থাকে যে অনেক পরিবারকে চুলা জ্বালানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই বিকল্প হিসেবে বিদ্যুৎচালিত চুলা বা এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করছেন। কিন্তু সেটাও আর্থিকভাবে অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে রাতেই রান্নার কাজ সারছেন। এছাড়া শিল্পকারখানার উৎপাদন এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে।

বলা সঙ্গত, গ্যাসের এ সংকটের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পুরোনো সরবরাহ লাইন, চাহিদার তুলনায় কম উৎপাদন এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, সামনে এটি আরো ভোগাবে। দিনে এখন গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। দিনে সর্বোচ্চ ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হলে পরিস্থিতি সামলানো যায়। তবে এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ২৫০ কোটি ঘনফুট। দেশে একসময় দিনে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হত। ২০১৮ সালের পর থেকে উৎপাদন কমতে থাকে। ঘাটতি পূরণে এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকে যায় গত আওয়ামী লীগ সরকার। নতুন গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোয় তেমন জোর দেওয়া হয়নি। ফলে উৎপাদন কমে এখন ১৯৩ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে। গত বছরও এটি ২০০ থেকে ২১০ কোটি ঘনফুট ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি বিভাগের অবহেলা ও অদক্ষতা এর জন্য দায়ী। সর্বোচ্চ মজুদ থাকার পরও কারিগরি পরিকল্পনা ও দক্ষ প্রযুক্তির অভাবে তিতাস ও কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানো যায়নি। অথচ কম মজুদ থাকা বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে কয়েকগুণ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে এখন তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। সর্বশেষ উন্মুক্ত দরপত্রে কোনো কোম্পানি সাড়া দেয়নি। এখন নতুন করে আবার দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। আগামী কয়েক বছরেও সমুদ্রে গ্যাস আবিষ্কারের সুযোগ নেই। স্থলভাগে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারে তেমন গতি নেই। পুরোনো গ্যাসক্ষেত্রে নতুন কূপ খনন করে উৎপাদন বাড়ানোর কাজ চলছে ধীরগতিতে। ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টি কূপ খননের কথা থাকলেও বিগত তিন বছরে হয়েছে মাত্র ১৬টি। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, চাইলেই চট করে গ্যাসের সংকট সমাধান করা যাবে না। উৎপাদন কমছে, এলএনজি আমদানির সক্ষমতাও সীমিত; আবার এলএনজির দামও বাড়তির দিকে। দেশে উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া কোনো সমাধান নেই। তাই অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দিয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো হচ্ছে।

বলা বাহুল্য, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩৮০ কোটি ঘনফুট হলেও সরবরাহ মাত্র ২৬০ কোটি ঘনফুট। এ বিশাল ঘাটতির কারণে রাজধানীসহ সারা দেশে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এছাড়া শীতকালে চাহিদা বৃদ্ধি এবং এলএনজি টার্মিনালের রক্ষণাবেক্ষণ কাজের কারণে গ্যাসের সরবরাহ আরো কমে গেছে। এ সংকট নিরসনে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি, পুরোনো পাইপলাইন সংস্কার এবং অবৈধ সংযোগ বন্ধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। একইসঙ্গে বিকল্প জ্বালানি উৎস ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা উচিত, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট মোকাবিলা করা যায়। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close