reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

ব্যাংক খাতের অস্থিরতা

স্বস্তি মিলবে কবে

দেশের অর্থনৈতিক খাত এখনো অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। রাজনৈতিক পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ৪ মাস পার হলেও ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা কাটার লক্ষণ নেই। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও এখনো কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীলতা ফেরাতে পারছে না। মূল্যস্ফীতি, তারল্য সংকট, খেলাপি ঋণের বোঝা এবং মূলধন ঘাটতি- সব মিলিয়ে দেশের আর্থিক ব্যবস্থা যেন এক গভীর চোরাবালিতে আটকে আছে। তবে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সরকারকে সময় দেওয়ার কথাও বলছেন বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা।

৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ ছিল অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও দুর্নীতির লাগামহীন বিস্তার। ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠদের শতকোটি টাকার সম্পদ গড়ার পেছনে যেই অনিয়ম ছিল, তার মাশুল দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি এবং আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনা জনগণের অসন্তোষের মূল উৎস। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এই সমস্যাগুলোর সমাধানে নানান উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এগুলোর বাস্তবায়ন বা ফলপ্রসূতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক হলেও তার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। সুদহার বাড়ানোর ফলে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে ছোট-বড় ব্যবসা সংকুচিত হচ্ছে, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আশরাফ আহমেদ যথার্থই বলেছেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ফলে বাজারে চাহিদা ও সরবরাহ উভয়ই হ্রাস পাচ্ছে। ফলত অর্থনীতির চাকা ঘুরছে না, বরং স্থবির হয়ে পড়ছে।

ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংক বিপুল পরিমাণে অর্থ সহায়তা দিলেও তা মূলত ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা ঢাকার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা এখনো অকার্যকর। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪০ শতাংশের বেশি। এটা শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং কাঠামোগত এবং নৈতিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়। অপরদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপও আশানুরূপ ফল দিচ্ছে না। নভেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে। সরকার পণ্যের আমদানি শুল্ক কমালেও খুচরা বাজারে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বাজারের মধ্যস্বত্বভোগী এবং অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে দাম বাড়িয়ে চলেছে। ভোক্তারা তাই সরকারের পদক্ষেপের সুফল পাচ্ছেন না। বিশ্লেষকদের মতে, শুধু বাজার তদারকি আর জরিমানা দিয়ে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সাপ্লাই চেইনের তথ্য উন্মুক্ত করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের পরামর্শ অনুযায়ী, গুদামে কী পরিমাণ পণ্য মজুদ আছে, আমদানি কতটা হচ্ছে- এসব তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করা গেলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা কঠিন হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য আরো কার্যকর এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রয়োজন। সময়ের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সঠিক দিকনির্দেশনার অভাব যেন এ সংকটকে দীর্ঘায়িত না করে। ব্যাংকিং খাত সংস্কার এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এ অস্থিরতা কাটবে না। দেশকে আর্থিক চোরাবালি থেকে উদ্ধার করতে হলে এখনই নীতি-নির্ধারকদের সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close