reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

চালের বাজারে অস্থিরতা

শুল্কমুক্ত আমদানির সুফল কোথায়

সরকার বাজারে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত মাসে শুল্ক প্রত্যাহার করে চাল আমদানি শুরু করেছে। এটি ছিল একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও খুচরা ও পাইকারি বাজারে চালের দামে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ বাস্তবতা নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারত থেকে শুল্কমুক্ত আমদানি চালের মূল্য কমানোর বদলে বরং ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য সুযোগ তৈরি করেছে। শুল্ক প্রত্যাহারের পরপরই ভারত টনপ্রতি ৬০ ডলার মূল্য বৃদ্ধি করেছে, যার ফলে প্রত্যাশিত কম দামে চাল আমদানি সম্ভব হয়নি। আগের ৩৬০ ডলার থেকে বেড়ে ৪২০-৪৩০ ডলার দরে রপ্তানি করছে তারা। ফলস্বরূপ, বন্দরে চালের দাম কেজিতে ৫২-৫৫ টাকা থেকে নেমে আসেনি। দেশীয় চালের তুলনায় আমদানিকৃত চালের দাম বেশি থাকায় ব্যবসায়ীদেরও তাতে আগ্রহ কম। অন্যদিকে, দেশে চালের পর্যাপ্ত উৎপাদন সত্ত্বেও বাজারে দাম বাড়ছে। কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, নওগাঁ জেলার উৎপাদিত চাল দেশের একটি বড় অংশের চাহিদা মেটায়। কিন্তু তবুও মিল মালিকদের একটি সিন্ডিকেট চাল মজুদ রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। মিলগেটে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা পর্যায়েও তা বেড়ে গেছে। এটি সরাসরি ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় নীতিনির্ধারকদের কিছু কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রথমত, আমদানি নির্ভরতার পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদনকে আরো উৎসাহিত করতে হবে এবং মিলগেটে সিন্ডিকেট ভাঙতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। খাদ্য বিভাগের নিয়মিত তদারকি চালানোর পাশাপাশি গুদামজাত চালের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। যেসব মিল মালিক আইন অমান্য করে চাল মজুদ করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। দ্বিতীয়ত, শুল্কমুক্ত আমদানিব্যবস্থা চালু করার আগে রপ্তানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে সঠিক কৌশল ও বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে, যাতে তারা আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধি করতে না পারে। এটি নিশ্চিত করা গেলে ভবিষ্যতে শুল্কমুক্ত আমদানির সুফল ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাবে। এ ছাড়া, কৃষকদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির মতো অন্য সমস্যা সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা আরো সুসংহত করা প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি বিভাগ এবং খাদ্য বিভাগের মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে মাঠপর্যায়ে দ্রুত হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সংকটের সময় বাজারে চালের সরবরাহ বাড়াতে সরকারি গুদামের মজুদ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল ন্যায্যমূল্যে সরবরাহ করা যেতে পারে। এ উদ্যোগ অস্থির বাজারকে সাময়িকভাবে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি, চালের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে জড়িত সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নজরদারি আরো জোরদার করা হলে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির প্রবণতা কমবে। বাজার ব্যবস্থাপনার এসব ঘাটতি দূর করতে পারলেই চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের ন্যায্যতার সঙ্গে ন্যূনতম চাহিদা পূরণ হবে।

পরিশেষে বলা যায়, চালের বাজারে অস্থিরতা শুধু কৃত্রিম সংকট নয়; এটি নীতির দুর্বলতা ও তদারকির অভাবের প্রতিফলন। সরকারের সদিচ্ছার পাশাপাশি যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করলেই এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাজার ব্যবস্থাপনায় সঠিক নজরদারি এবং স্বচ্ছতা আনতেই হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close