বিভেদ নয়, চাই জাতীয় ঐক্য
বিগত কয়েকদিনের নানান নৈরাজ্যে উদ্বিগ্ন দেশের মানুষ। তাদের প্রত্যাশা এসব নৈরাজ্য মোকাবিলায় সরকার, রাজনৈতিক দল এবং অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের ঐকমত্যের কোনো বিকল্প নেই। যখন-তখন রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন এবং বিশৃঙ্খলায় জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। ধর্মীয় ইস্যু এবং হুটহাট দাবিতে কূটনৈতিক সম্পর্কেও এর প্রভাব পড়ছে। শৃঙ্খলা না ফিরলে নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে। তাই নৈরাজ্য দমনে শক্ত হতে হবে সরকারকে। নইলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে দেশে যে অভাবনীয় রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এমনকি নানান বিভেদের সুযোগে দেশের শৃঙ্খলা ভঙ্গে ‘তৃতীয় পক্ষ’ সুযোগ নিতে পারে। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় অভ্যুত্থানের সব শক্তির জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।
বলা সঙ্গত, এরই মধ্যে বিএনপি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছে। জামায়াত নেতারা সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে জানান, বিএনপির জাতীয় ঐক্যের আহ্বানের সঙ্গে তারাও একমত। বিএনপি বলছে, ধর্মীয় ইস্যুতে কিছু হঠকারিতা চলছে। ইসকন বিতর্কও অহেতুক। অভ্যুত্থানের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ‘ইনফ্লুয়েন্সাররা’ তাদের অনুসারীদের দিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে হাজারো মানুষের রক্তস্নাত অভ্যুত্থানে প্রতিষ্ঠিত সরকার জনসমর্থন হারাবে। সরকার ব্যর্থ হলে অন্য কোনো পক্ষ সুযোগ নিতে পারে। এছাড়া এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘এনগেজমেন্ট’ বাড়াতে সরকারপ্রধানকে পরামর্শ দেন জামায়াত আমির। ড. ইউনূস তাতে ঐকমত্য পোষণ করেন। ভারত থেকে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চলছে, তা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। জবাবে তিনি এখন থেকে সব অপপ্রচারের পাল্টা বক্তব্য তুলে ধরা হবে বলে জানান। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের উপদেষ্টারাও জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন। উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, রাজনৈতিক দল, জনগণ বা সরকার এখানে আলাদা কিছু নয়। বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষা এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখার এ কাজ সবার। এই ঐক্য ধরে রাখলে আশা করি, আর কখনোই ফ্যাসিজম ফিরে আসবে না। যে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা-উন্মত্ততা কীভাবে রুখে দেওয়া যায়, সে বিষয়ে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতীয় ঐক্যের আহ্বান নিয়ে ছাত্রনেতা, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন। বলা বাহুল্য, দেশে এখন জাতীয় ঐক্য খুবই জরুরি। কারণ আমাদের দেশ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। আমাদের সবাই মিলে, ঐক্যবদ্ধভাবে এই অপতথ্যের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযানে নামতে হবে। যদিও বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। তবে এই সুসম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে।
আমরা আশা করি, নিজেদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি না করে ঐক্যের মধ্যে থেকেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এছাড়া আর কোনো পথ নেই। একইসঙ্গে ন্যূনতম সংস্কারের পর যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন প্রয়োজন। জাতি-ধর্ম-দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে জাতীয় ঐক্য আরো কীভাবে দৃঢ় করা যায়, প্রশাসনে আরো কীভাবে গতি আনা যায়, এ নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, যেটাতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এটাকে লাঘব করার জন্য মানুষের সামর্থ্যরে মধ্যে দ্রব্যমূল্য আনার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেসব বিষয়েও সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। তবে জাতীয় স্বার্থে আর কোনো বিভেদ নয়, চাই জাতীয় ঐক্য। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"