reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

সরকারি চাকরিতে শূন্যপদ পূরণে দেরি কেন?

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ১টি পদ শূন্য। এ বিপুলসংখ্যক শূন্যপদ পূরণের নির্দেশনা দিয়ে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে বলেছে। দীর্ঘদিন ধরে এ শূন্যপদগুলো পূরণে গড়িমসি এবং সঠিক পদক্ষেপের অভাব দেশের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি এবং প্রশাসনিক কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

বাংলাদেশে বেকারত্বের চিত্র দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগজনক। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পরও বহু শিক্ষার্থী চাকরি না পেয়ে হতাশার সাগরে ভাসছেন। একদিকে বেসরকারি খাতে চাকরির সুযোগ সীমিত; অন্যদিকে সরকারি চাকরির শূন্যপদগুলো পূরণে দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতার কারণে তরুণদের হতাশা বাড়ছে। সরকারি চাকরি বরাবরই তরুণদের কাছে আকর্ষণীয়। এর পেছনে আর্থিক নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা এবং নির্ভরযোগ্য পেনশন সুবিধা বড় কারণ। তবে এত বড়সংখ্যক শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও তা পূরণে উদাসীনতা কেন? সম্প্রতি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) ৪৭তম বিসিএস নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে মাত্র ৩ হাজার ৬৮৮টি শূন্যপদ পূরণের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। কিন্তু এ সংখ্যা চাহিদার তুলনায় নগণ্য। বিপিএসসি প্রধানত প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগের দায়িত্বে থাকে। তবে অন্যান্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদ পূরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং দপ্তরকে ভূমিকা পালন করতে হয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়ার ধীরগতি এবং অব্যবস্থাপনা স্পষ্ট। বেকারত্ব শুধু একজন ব্যক্তির আর্থিক সংকটের বিষয় নয়; এটি একটি পরিবার ও সমাজের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। একটি বেকার তরুণ মানেই হলো একটি পরিবারের এক বা একাধিক সদস্যের স্বপ্নের ভেঙে পড়া। এছাড়া বেকারত্ব দীর্ঘ মেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা সামাজিক স্থিতিশীলতায় বিরূপ প্রভাব ফেলে।

দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য আমাদের কিছু মূল দিক বিবেচনায় আনতে হবে। প্রথমত, দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় দক্ষতা উন্নয়নমুখী পরিবর্তন আনতে হবে। এমন অনেক তরুণ রয়েছেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করলেও কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে ব্যর্থ। তাই দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষাক্রমকে কর্মমুখী করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, উদ্যোক্তা সৃষ্টির প্রতি জোর দিতে হবে। সরকার যদি তরুণদের জন্য স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান এবং সহজ ব্যবসায়িক নীতিমালা প্রণয়ন করে, তবে অনেক তরুণ নিজে কাজের সুযোগ তৈরি করতে সক্ষম হবেন। তৃতীয়ত, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তরুণদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। একটি কার্যকর প্রশাসনিক কাঠামো এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া এ বিপুলসংখ্যক শূন্যপদ পূরণ এবং বেকারত্ব নিরসন অসম্ভব। সরকারের উচিত দ্রুত সময়ে এ সমস্যা সমাধানে তৎপর হওয়া। তরুণ প্রজন্মের কর্মদক্ষতা এবং উদ্যম কাজে লাগিয়ে আমরা শুধু একটি শক্তিশালী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব না, বরং একটি কর্মক্ষম, আত্মনির্ভরশীল এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।

শূন্যপদ পূরণে যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তবে তা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্যও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তরুণদের জন্য এ এক নতুন ভোরের সূচনা হতে পারে, যা তাদের হতাশার অন্ধকার থেকে বের করে এনে

স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close