reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

পার্বত্য শান্তিচুক্তি

উন্নয়ন এগিয়েছে থামেনি সংঘাত

পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৭ বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল সোমবার। এই অঞ্চলের শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয়েছিল ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের এই পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, অবহেলা এবং সংঘাতের ইতি ঘটিয়ে একটি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে পাহাড়ের চিত্র কিছুটা বদলালেও পুরোপুরি শান্তি ও স্থিতিশীলতা এখনো অধরা।

চুক্তির পর পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের যে ধারা সূচিত হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার প্রসার ঘটেছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ বেড়েছে, তেমনি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান আগের তুলনায় উন্নত হয়েছে। কিন্তু উন্নয়ন আর স্থায়ী শান্তি এক জিনিস নয়। পাহাড়ি অঞ্চলে গোষ্ঠীগত সংঘাত, অস্ত্রের ঝনঝনানি এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম সেই শান্তির পথকে প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত করছে। চুক্তি সইয়ের পরও পার্বত্য এলাকায় সংঘাত থামেনি। বরং নানা আঞ্চলিক সংগঠন ও তাদের উপগ্রুপের উত্থান পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। অন্যদিকে, চুক্তি নিয়ে বিতর্ক এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধ এখনো চুক্তির সফল বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদসহ কিছু সংগঠন শান্তিচুক্তির কিছু ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের মতে, এই চুক্তি একতরফাভাবে এক পক্ষকে সুবিধা দিয়েছে, অন্য পক্ষের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে। পার্বত্য চুক্তির পক্ষে থাকা গোষ্ঠীগুলো বলছে, চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে পাহাড়ে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর ভূমিকা আরো জোরালো হওয়া প্রয়োজন। সংঘাত নিরসনে কেবল একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি নয়, বরং সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সমন্বিত সমাধানে আসা জরুরি। পাহাড়ি এবং বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন না করা গেলে শান্তি চুক্তি তার আসল উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে না। পার্বত্য শান্তিচুক্তি শুধু একটি আইনগত দলিল নয়, এটি শান্তি ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। ২৭ বছর পরও এই প্রতিশ্রুতির পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখা না যাওয়ায় প্রশ্ন জাগে, চুক্তির সীমাবদ্ধতা এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার দুর্বলতা কোথায়? উন্নয়ন প্রকল্পের সফলতা থাকলেও সামাজিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি ভিত্তিতে একাধিক উদ্যোগ নিতে হবে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে দমন করতে হবে, কিন্তু একইসঙ্গে পাহাড়ি জনগণের অধিকার এবং প্রয়োজনগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ন্যায়ভিত্তিক সমাধানের পথে অগ্রসর হতে হবে।

শান্তিচুক্তির ২৭ বছর পর এই মুহূর্তে সময় এসেছে অর্জন ও সীমাবদ্ধতার নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করার। কেবল উন্নয়নের কথা বললেই চলবে না; পাহাড়ের মানুষকে প্রকৃত অর্থে শান্তি এবং নিরাপত্তা দিতে না পারলে চুক্তির লক্ষ্য অধরাই থেকে যাবে। এখন প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা, আন্তরিক প্রয়াস এবং সর্বোপরি সব পক্ষের আন্তরিক সহযোগিতা। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠাই হবে এই ঐতিহাসিক চুক্তির প্রকৃত সফলতা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close