reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু আয়োজনের প্রত্যাশা

বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ কর্মযজ্ঞের সূচনা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে গঠিত নতুন ইসির ওপর নির্ভর করছে একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের গুরুদায়িত্ব। তবে এ পথ মসৃণ নয়; নানা চ্যালেঞ্জ ও বিতর্ক পেরিয়ে ইসিকে এগোতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং সংসদীয় আসনের সীমানাবিন্যাস। প্রতিটি নির্বাচনেই এ দুটি বিষয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। সঠিক ও নির্ভুল ভোটার তালিকা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বর্তমান কমিশনের লক্ষ্য ২০২৫ সালের ২ মার্চ প্রকাশিত হালনাগাদ তালিকায় সঠিক ভোটার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা। তবে ভোটার তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের বিকল্প নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, তবে এতে বাজেট, জনবল এবং সময়ের চাপ বাড়বে। অন্যদিকে সংসদীয় আসনের সীমানাবিন্যাস একটি আরো স্পর্শকাতর ইস্যু। পূর্ববর্তী কমিশনগুলো সীমানাবিন্যাস নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে, যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতায় প্রভাব ফেলেছে। ২০০৮ সালের সীমানাবিন্যাসে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলো যে আপত্তি জানিয়েছিল, তা এখনো রাজনীতির ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য। বর্তমান কমিশনের জন্য এ ধরনের বিতর্ক এড়িয়ে চলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

নতুন ইসির কার্যক্রম ইতিবাচক ইঙ্গিত দিলেও তাদের সামনে রাজনৈতিক চাপ ও বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার পরীক্ষা রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ একটি পুরোনো বিষয়। তাই ইসিকে এমন কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে, যা জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এবং একটি শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে ইসিকে স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা এবং সহযোগিতা নিশ্চিত করাও ইসির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র শক্তিশালী হয় না।

গত ৩ বছরের নতুন ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা আছে, যা নতুন বছরের ২ জানুয়ারি খসড়া তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে। আর ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের নিয়ম রয়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তখন ১৬ বছর বয়সিদেরও তথ্য আগাম সংগ্রহ করেছিল ইসি। এতে ১ কোটি ১ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়, তাদের তখন ভোটার তালিকাভুক্তি করা হয়। বাকি ১৩ লাখ নাগরিকের তথ্য ইসির কাছে রয়েছে, যাদের বয়স আগামী ১ জানুয়ারি ১৮ বছর পূর্ণ হবে। ২০২৫ সালের ২ মার্চ হালনাগাদ তালিকায় তাদের নাম যুক্ত হবে। সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ভোটার রয়েছে ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হতে চলেছে। নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের প্রত্যাশা অনেক। তাই কমিশনের উচিত প্রতিটি সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা, যা দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close