সংখ্যালঘু সুরক্ষায় সরকারের পদক্ষেপ আশাব্যঞ্জক
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের নিরাপত্তা বরাবরই একটি স্পর্শকাতর বিষয়। সা¤প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার এ ইস্যুতে যে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা জনমনে আশার সঞ্চার করেছে। ভয়েস অব আমেরিকার এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, বর্তমান সরকার সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের জন্য আগের তুলনায় বেশি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পেরেছে।
জরিপের ফলাফলে উঠে আসা ৬৪.১ শতাংশ উত্তরদাতা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় সংখ্যালঘুদের অধিক সুরক্ষা প্রদান করছে। যদিও এ ফলাফল একটি উন্নয়নের ইঙ্গিত দেয়, তা সত্ত্বেও সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের মধ্যে কিছু অংশ এখনো শঙ্কিত। জরিপ অনুযায়ী, সংখ্যালঘুদের ৩৩.৯ শতাংশ মনে করেন, তাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। এ চিত্র আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এখনো অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ওপর যেসব হামলার ঘটনা ঘটেছিল, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় স্থাপনাগুলোয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সেসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় যেভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে, তা একটি ইতিবাচক উদাহরণ হয়ে থাকবে। সেনাবাহিনী মোতায়েন, স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয়তা এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ে পাহারার ব্যবস্থা সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তার অনুভূতি ফিরিয়ে এনেছে। নূর খানের মতো মানবাধিকারকর্মীরাও এ পদক্ষেপগুলোকে প্রশংসা করেছেন। যদিও বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত, সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ওপর আস্থার সংকট এখনো বিদ্যমান।
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না হলে প্রশাসনিক পদক্ষেপগুলো দীর্ঘ মেয়াদে সফল হতে পারবে না। এখানে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি জনগণকে বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠতে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন, তাহলে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মধ্যে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির বোধ তৈরি করতে হবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু আইনশৃঙ্খলার বিষয় নয়; এটি একটি রাষ্ট্রের বহুত্ববাদী মূল্যবোধের প্রতিফলন। বর্তমান সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তবে এ সাফল্যকে টেকসই করতে হলে নিয়মিত মনিটরিং, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের প্রতি আহ্বান, বর্তমান ইতিবাচক ধারা যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়। সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের স্বস্তি ও আস্থার পরিবেশ গড়ে তুলতে হলে স্থানীয় জনগণ, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়; সমাজের বিভিন্ন স্তরে সংখ্যালঘুদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করাও অত্যন্ত জরুরি। সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের নিজ নিজ ধর্ম, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য চর্চার ক্ষেত্রে একটি নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন সমাজের প্রতিটি অংশের জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে। বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে। তবে এ যাত্রাপথে থেমে থাকার সুযোগ নেই। প্রশাসনের সক্রিয়তা এবং সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন একসঙ্গে কাজ করলে বাংলাদেশ একটি সহনশীল, সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
"