reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩০ নভেম্বর, ২০২৪

জ্বালানি খাতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা

বাংলাদেশের জ্বালানি খাত দীর্ঘদিন ধরে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। তেল পরিবহনের উচ্চ ব্যয়, সময়ক্ষেপণ, চুরি এবং পরিবহন ঝুঁকি এসব সংকটের অন্যতম। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্পের বাস্তবায়ন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। প্রকল্পটি কেবল জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে না, একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতি ও পরিবহন খাতে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল আসে নদী ও সড়কপথে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মাঝে মধ্যেই তেল পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া নৌপথ ও সড়কপথে তেল পরিবহনের প্রচলিত পদ্ধতি ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। শুষ্ক মৌসুমে নৌপথে নাব্য সংকট। তদুপরি, তেল চুরি ও সিস্টেম লসের সমস্যাও দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন চালু হলে এসব সমস্যা বহুলাংশে নিরসন সম্ভব হবে। এখন পাইপলাইনে তেল সরবরাহ কার্যক্রমের উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে ৩০ লাখ টন তেল আসবে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে। এতে বিপুল অঙ্কের পরিবহন ব্যয়ের পাশাপাশি সময়ও সাশ্রয় হবে। প্রতি বছর প্রায় ২৫০ কোটি টাকার পরিবহন খরচ সাশ্রয় এবং সময় অপচয় রোধের পাশাপাশি চুরি ও অপচয়ের মতো সমস্যার সমাধান হবে। বিপিসির তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সারা দেশে নৌপথে ৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন টন জ্বালানি পরিবহন করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন তেল পরিবহন করা হয়েছে। বর্তমানে এ রুটে প্রতি মাসে ১১০টি জাহাজ জ্বালানি পরিবহন করে। পাইপলাইন নির্মাণের মাধ্যমে পরিবহন ব্যবস্থায় নিরাপত্তার একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। নদীপথে তেল ট্যাংকার দুর্ঘটনা বা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁঁকি যেমন থাকবে না, তেমনি দ্রুত ও নিরাপদে তেল সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। এ ছাড়া পরিবহন কার্যক্রম ধাপে ধাপে ৫ মিলিয়ন টন পর্যন্ত উন্নীত করার সক্ষমতা ভবিষ্যতের জ্বালানি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা বিলম্ব এবং ব্যয় বৃদ্ধি ছিল উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ।

দুই বছর আগে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতায় বিলম্বিত হয়েছে। শুরুতে পাইপলাইন প্রকল্পটির ব্যয় ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ধরা হয়। ফলে খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬০০ কোটি টাকায়। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সাশ্রয় ও উন্নত কার্যকারিতার মাধ্যমে প্রকল্পের বিনিয়োগ ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যেই উঠে আসবে। পাইপলাইনের কাজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়া একটি ইতিবাচক দিক। এর মাধ্যমে প্রকল্পের স্থায়িত্ব ও গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশেষভাবে পাইপলাইনের ২২টি নদী ও খালের তলা দিয়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা একটি উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগত সাফল্য। ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্প কেবল জ্বালানি খাতেই নয়, পুরো দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। তবে এ ধরনের প্রকল্পগুলোয় সময় ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আরো দক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি। এ ছাড়া পাইপলাইন পরিচালনায় যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

জ্বালানি খাতের এই সাফল্য আমাদের আশা জাগায়। সঠিক দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশ অন্যান্য খাতেও এমন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে। এটাই দেশের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার পথে এক নতুন অধ্যায় হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close