মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ

  ২৯ নভেম্বর, ২০২৪

ধর্মকথা

ইসলামে সঠিক তথ্যের গুরুত্ব ও মূল্যায়ন

ইংরেজি misinformation, Fake news হলো এমন এক যোগাযোগ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ভুলত্রুটিপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর তথ্য সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। কোনো তথ্য জানা মাত্রই সেটি যাচাই-বাছাই না করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করাকে ‘চিলে কান নেওয়া’ প্রবাদের মাধ্যমে ব্যঙ্গ করা হয় :

‘এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে,

চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।

কানের খোঁজে ছুটছি মাঠে, কাটছি সাঁতার বিলে,

আকাশ থেকে চিলটাকে আজ ফেলব পেড়ে ঢিলে।

দিনদুপুরে জ্যান্ত আহা, কানটা গেল উড়ে,

কান না পেলে চার দেয়ালে মরব মাথা খুঁড়ে...’।

(প-শ্রম : শামসুর রাহমান)

ইসলামে তথ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ আমাদের সতর্ক করে বলেন, ‘হে মুমিনরা! কোনো ফাসিক যদি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে ভালোভাবে যাচাই করে দেখবে, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি না করে বসো! ফলে নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তোমাদের অনুতপ্ত হতে হয়।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ০৬)

মিথ্যা অনুমান ইমানের পরিপন্থী ও ক্ষতিকর, মহান আল্লাহর নির্দেশ, ‘হে মুমিনরা! তোমরা বেশি অনুমান (ধারণা করে কথা বলা) থেকে বেঁচে থাকো। নিশ্চয়ই কিছু অনুমান মহাপাপ...।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১২)

এ বিষয়ে আলেমরা বলেন, ‘বাহ্যত ভালো মানুষের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করা অবৈধ। আবার বাহ্যত মন্দ ও পাপাচারীর প্রতি মন্দ ধারণা করা বৈধ।’ (কুরতুবি)

সত্যাসত্য বিবেচনার গুরুত্ব প্রসঙ্গে প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা কোনো বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে কুচিন্তা (ধারণা/অনুমান) থেকে বেঁচে থাকো। কেননা কুচিন্তা হলো আকজাবুল হাদিস বা সবচেয়ে বড় মিথ্যা... পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ কর না। আর পরোক্ষ নিন্দাবাদে একে অপরের পেছনে লেগে থেক না; বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা; ভাই ভাই হয়ে থাকবে।’ (বোখারি)

ইমানদারের মধ্যে অন্য দোষত্রুটি ও দুর্বলতা থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু মিথ্যা ও খেয়ানতের প্রবণতা ইমানদারের চরিত্রের সঙ্গে মানানসই নয়। প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘মুমিনের চরিত্রে সবকিছুর অবকাশ থাকতে পারে, কিন্তু প্রতারণা ও মিথ্যা নয়।’ (মুসনাদে আহমাদ)

প্রিয়নবী (সা.) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলিমদের দোষ অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করেন। আল্লাহ যার দোষ অনুসন্ধান করেন, তাকে স্বগৃহেও লাঞ্ছিত করে দেন।’ (আবু দাউদ)

হাদিসে আছে, ‘তোমরা সত্যকে অবলম্বন করো। কারণ সত্যবাদিতা ভালো কাজে উপনীত করে। আর ভালো কাজ উপনীত করে জান্নাতে। যে মানুষ সত্য বলে ও সত্যবাদিতার অন্বেষায় থাকে, একপর্যায়ে সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে লিখিত হয়ে যায়...।’ (মুসলিম)

হাদিসে আরো আছে- ‘কারো মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে যা শোনে (কোনো বাছ-বিচার ছাড়া) তাই প্রচার করতে থাকে।’ (মুসলিম) তাই ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে তথ্যের মূল্যায়ন জরুরি।

প্রক্রিয়াকে সাধারণত তদন্ত বলে। সঠিক তথ্য বড় বড় সমস্যার সমাধানে সহায়ক, অন্যদিকে ভুল তথ্য অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে। ভুল তথ্যের ক্ষতিকর দিক হলো : ১. মানুষ প্রতারিত, প্রভাবিত হতে পারে, ২. আতঙ্ক তৈরি হতে পারে, ৩. অবিশ্বাস, মানবিক ও মানসিক বিপর্যয়, হানাহানি, সংঘাত তৈরি হতে পারে। এমন প্রক্রিয়ায় অনায়াসেই ভুল তথ্য সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অসত্য তথ্যের মাধ্যমে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সুনামহানি বা কলঙ্কলেপনের প্রচেষ্টা চালানো হয়। এমন অপেশাদার সাংবাদিকতাকে হলুদ সাংবাদিকতা বা ণবষষড়ি লড়ঁৎহধষরংস বলে।

বস্তুত মিথ্যা ধ্বংস ডেকে আনে। জ্ঞান, গবেষণা, আন্তঃপরীক্ষণের মাধ্যমে সত্যে উপনীত হওয়ার তাওফিক লাভ করা নির্ভর করে মহান আল্লাহর রহমতের ওপর। পবিত্র কোরআনের স্পষ্টতা এখানেই- ‘এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই, তারা শুধু অনুমানের অনুসরণ করে। আর সত্যের মোকাবিলায় অনুমানের কোনোই মূল্য নেই। অতএব তাকে উপেক্ষা করে চল, যে আমার স্মরণে বিমুখ এবং যে শুধু পার্থিব জীবনই কামনা করে। তাদের জ্ঞানের দৌড় এ পর্যন্তই। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালকই ভালো জানেন, কে তার পথ থেকে বিচ্যুত এবং তিনিই ভালো জানেন, কে সৎপথপ্রাপ্ত।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ২৮-৩০)

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close