reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

শিশুশ্রম নিরসনে আইনের বাস্তবায়ন জরুরি

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। বর্তমানে কথাটির মর্মার্থ সংকুচিত হয়ে পড়েছে; কারণ বর্তমান সময়ে শিশুশ্রম একটি রাষ্ট্রীয় ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সুষ্ঠু বিচক্ষণতার অভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিরাট একটি অংশ নিজেদের সক্রিয়তা হারাতে বসেছে। বাস্তবতার কাছে হার মানতে হয় দরিদ্র ও অসচ্ছল পরিবারের মানুষদের। তাই তো পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে অভিভাবকরা নিজেদের শিশুদের কাজে লাগিয়ে দেন। এতে তারা কল-কারখানা থেকে শুরু করে পাথরভাঙা, মানুষের বাসাবাড়ি, বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ গাড়ির গ্যারেজ, দোকানপাটে কাজ করে। কিন্তু প্রতিটি শিশুর সুস্থ ও নিরাপদভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। তাই শিশুদের সুস্থ ও উন্নত জীবনযাপনের জন্য যুগোপযোগী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

বলাবাহুল্য, শিশুশ্রম নিরসনে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা সংস্কারের তাগিদ দিয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ওই সংস্কারের তালিকায় শিশুশ্রমের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে গণমাধ্যম বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। গত মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) আয়োজিত সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা। সংলাপে উল্লেখ করা হয় আইনগতভাবে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও দেশে ৩৫ লাখ শিশুশ্রমে নিয়োজিত আছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ ৬৮ হাজার। শ্রমে নিয়োজিত শিশুরা নানা ধরনের শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন এবং সহিংসতার শিকার হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব শিশুশ্রমিক ভয়াবহ নির্যাতন এবং ক্ষেত্রবিশেষে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করছে। এ ছাড়া অসংখ্য শিশু দীর্ঘ সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করার ফলে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অল্প বয়সে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে। এমতাবস্থায় শিশুশ্রম নিরসনে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ এবং দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে গণমাধ্যমগুলো আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া শিশুশ্রম অধিকার সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে; এ ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শিশুশ্রম দমনে কঠোর আইন বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বলা সংগত, সরকার আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদ ও কনভেনশনগুলো স্বাক্ষরের মাধ্যমে দেশের সব শিশুর অধিকার সুরক্ষার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের এই প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিশুশ্রম সম্পর্কিত বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। সে ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও গণমাধ্যমকে সমন্বিত এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, একটি সুস্থ-সুন্দর রাষ্ট্র এবং আদর্শ জাতি গঠনে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। তবেই আজকের শিশুরা আগামীতে রাষ্ট্র ও জাতি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close