আজহার মাহমুদ
মুক্তমত
সংস্কার, নির্বাচন ও জনগণ
ইতিমধ্যে অন্তর্র্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূরণ হয়েছে। সেই উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণও দিয়েছেন। সেই ভাষণ দেশের অধিকাংশ জনগণই শুনেছেন বলে আমার বিশ্বাস। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরও চলছে বেশ মতপার্থক্য। একেক দলের একেক মত বেরিয়ে আসছে। গণমাধ্যমের সুবাদে সেসবও এ দেশের জনগণ জানতে পারছে। কেউ আগে সংস্কার চাইছে, কেউ আবার নির্বাচন। কিন্তু এই সংস্কার ও নির্বাচন চাওয়ার অধিকার আসলে কার হাতে?
সত্যি বলতে, বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতা উল্টালে কোনোকালেই এ দেশের জনগণের হাতে ক্ষমতা ছিল না। কাগজে-কলমে সব ক্ষমতার মালিক জনগণ লেখা থাকলেও বাস্তবে তার ছিটেফোটাও দেখা যায় না। ‘সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে’ এই বিতর্কে গুটিকয়েক যখন ব্যস্ত, তখন দেশের অধিকাংশ জনগণ ভাবছে ‘দেশটাতে আসলে হচ্ছে কী!’
সত্যি বলতে, এ দেশের মানুষ ‘সংস্কার’ নামক এই কঠিন শব্দ বুঝে না। এ দেশের মানুষ বুঝে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হাতের নাগালে থাকা, সড়কে পরিবহন খরচ সহনীয় মাত্রায় থাকা, চিকিৎসাসেবা সহজ হওয়া। এ দেশের মানুষ এত কঠিন কঠিন ভাষা আর কাজ বুঝতে চায় না। তারা বুঝতে চায়, ইন্টারনেটের দাম কম হোক, তেলের দাম কম হোক, পোশাকের দাম কম হোক। এসব সুবিধা যারা দিতে পারবে এ দেশের জনগণ তাদেরই ভালোবাসবে।
২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান সফল হয়েছে ছাত্র-জনতার মাধ্যমে। তবে আমি সেটাকে সহজ করে বলতে চাই, ২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান জনতার মাধ্যমেই সফল হয়েছে। ছাত্র, শ্রমিক, শিক্ষক, কর্মজীবী, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী সবাই কিন্তু দিনশেষে এ দেশের জনগণ। সুতরাং এ দেশের জনগণই গণ-অভ্যুত্থান সফল করেছে। কিন্তু এই জনগণের কথা কে ভাবছে?
অন্তর্র্বর্তী সরকারের ৩ মাসে চোখে পড়ার মতো কিছু কাজ রয়েছে। তবে এ সরকারের কাছে জনগণের যে উচ্চ প্রত্যাশা, তা এখনো এ সরকার পূরণ করতে পারেনি। যদিও অল্প সময়ে এই জাজমেন্ট করার সুযোগ নেই। তবে সরকারের উচিত দৃশ্যমান কিছু কাজ করা। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টা সেটা হচ্ছে, জনগণ আসলে কী চায় সেটা বুঝতে পারা। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।
বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে এই সরকার এখন পর্যন্ত ব্যর্থ। অথচ এই সরকারের কাছে জনগণের এটিই ছিল অনেক বড় প্রত্যাশা। এই সিন্ডিকেট বিগত ১৬ বছর যেভাবে এ দেশের মানুষের রক্ত চোষে নিয়েছে, এখনো নিচ্ছে। সরকার বদলেও যদি জনগণের ভাগ্য না বদলায়, তাহলে জনগণ আবারও আস্থা হারাবে। জনগণের প্রাথমিক যেসব চাহিদা রয়েছে, সেসব পূরণ করে জনমনে স্বস্তি ফেরানোটাই হোক প্রথম সংস্কার।
সংবিধান, আইন, নির্বাচন- এসব সংস্কারের সময় আছে। জনগণকে এখন যাতে কোনো শক্তি আবারও ভিন্নদিকে ধাবিত করতে না পারে, সে জন্য অবশ্যই জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে হবে। আজকাল সাধারণ মানুষ বাজারে গেলেই হা-হুতাশ করেন। মাছ-মাংস যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই যখন অবস্থা, তখন এই সরকারের উচিত এই সেক্টরে আরো বেশি গুরুত্ব দিয়ে এ সমস্যা সমাধান করা। আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যা থেকে জনগণ যেদিন রেহাই পাবে, সেদিন বাংলাদেশের অনেক সমস্যা আপনা-আপনি দূর হয়ে যাবে।
বর্তমান সময়ে মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। তার সঙ্গে বেকারত্ব অনেক বড় একটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। এই সমস্যার মধ্যে বাজারের ঊর্ধ্বমুখিতা বিরাট সমস্যায় ফেলছে জনগণকে। এর মধ্যে দেশে দুর্যোগ, বিপ্লব নানা কিছু ঘটে গেল। তার সঙ্গে বৈদেশিক চাপ ও ষড়যন্ত্র তো আছেই। সব মিলিয়ে বর্তমান সরকারের একটা বিরাটা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে এই পরীক্ষা ও চাপ- সবকিছুই এ সরকার মাথা পেতে নিয়েছে এ দেশের জনগণের জন্য। এ দেশের জনগণকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসতে, তাদের সচ্ছলতা ফিরিয়ে দিতে এ সরকারের কাছে জনগণ সেটাই প্রত্যাশা করছে।
লেখক : প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক, মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্ট (চট্টগ্রাম সময়)
"