reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত নয়, চাই সহিষ্ণুতা

ছাত্রদের মধ্যে অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এ সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। নানা অজুহাতে রাস্তায় নামছেন শিক্ষার্থীরা। জড়িত হচ্ছেন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। দেশ-জাতির ক্রান্তিলগ্নে যে ছাত্রসমাজ বরাবরই সোচ্চার থেকেছে। আজ কেন আত্মকলহে লিপ্ত হচ্ছেন তারা। এর হেতু কী? শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে, সামান্য অজুহাতে নিজেদের মধ্যেই যদি তারা হানাহানিতে লিপ্ত হন, তাহলে বিগত দিনের গৌরবময় সব অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা হঠাৎ ‘অশান্ত’ হয়ে উঠেছেন। ফলে দিন দিন পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে শুরু করেছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, এসব বিশৃঙ্খলার কারণ কী এবং কীভাবে সম্ভব এ সমস্যার সুষ্ঠু প্রতিকার।

বলা বাহুল্য, গত রবিবার ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেন মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা পাশের শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজেও ভাঙচুর এবং লুটপাট করেন। আগের দিনের হামলার পাল্টা গত সোমবার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া গত রবিবার রাতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইল (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় আহত হন অনেকে। উঠে মৃত্যুর গুজবও। হামলা-ভাঙচুর ও সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে সোহরাওয়ার্দী এবং কবি নজরুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী কলেজে দুদিন এবং কবি নজরুল কলেজে এক দিন শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে ঢাকা কলেজ এবং সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরাও সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ানোয় দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আন্দোলনকারী নেতারা। এ ছাড়া বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তারা। খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীদের লাগামহীনতার কারণ। বৈঠকে গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী ঐক্য ধরে রাখতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রনেতারা। পাশাপাশি তারা সরকারকে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দেন। তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করা না গেলে এমন সংঘাতের ঘটনা বাড়তেই থাকবে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ প্রশাসনের কারো ব্যর্থতা থাকলে তাদেরও পরিবর্তনের কথা জানানো হয়েছে। আমরা মনে করি, যেকোনো অনাহুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় যত দ্রুত সম্ভব উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। সামনের দিনে নতুন বাংলাদেশ কীভাবে গঠন করা যায় এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ঐক্য ধরে রেখে সব ধরনের অরাজকতা ঠেকানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করাও জরুরি। এসব সংঘাতের পেছনে কোনো ধরনের ইন্ধন থাকলে তা খুঁজে বের করে ইন্ধনদাতাদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের সংঘাত ছাড়াও বিভিন্ন দাবি আদায়ে রাস্তাঘাট বন্ধের মতো ঘটনাকে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ে চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। যার ফলে নির্বিঘ্নে যানবাহন ও জনচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সমাজ ও অপরাধবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এর লাগাম টেনে ধরা জরুরি। জনচলাচল ও স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড নিয়ে জনমনে যে ভীতি তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর হওয়া উচিত’- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close