সুশাসনের উজ্জ্বল উদাহরণ
স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও ঘুষমুক্তির নতুন সূচনা
স্বাস্থ্য খাতে ঘুষ ও দুর্নীতি রোধে যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি এবং অনিয়মের যে অচলায়তন তৈরি হয়েছিল, তা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ভেঙে পড়েছে। বিশেষ করে চিকিৎসকদের বদলি ও পদোন্নতিতে ঘুষ এবং তদবিরমুক্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়া চালুর ফলে একটি কার্যকর ও ন্যায্য ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে পাঁচ হাজার চিকিৎসককে নতুন কর্মস্থলে পদায়ন করা হয়েছে, যা ঘুষ ছাড়া সম্পন্ন হয়েছে। এই পদক্ষেপে যেমন দুর্নীতির পথ বন্ধ হয়েছে, তেমনি যোগ্য চিকিৎসকরা তাদের কাজের প্রকৃত মূল্যায়ন পেয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন নেতৃত্বের এই উদ্যোগ সাধারণ চিকিৎসকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়েছে। তারা এখন নির্ভয়ে এবং আন্তরিকভাবে মানুষের সেবায় নিয়োজিত হতে পারছেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য খাতে সিন্ডিকেটের রাজত্ব ছিল। অধ্যাপক সামিউল ইসলাম সাদীর মতো ব্যক্তিরা বদলি-বাণিজ্যকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ঢাকার মতো এলাকাগুলোর বদলিতে ঘুষের হার ছিল ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। এর ফলে মেধাবী এবং আর্থিকভাবে দুর্বল চিকিৎসকরা কোণঠাসা হয়ে পড়তেন। অথচ আজকের নতুন পরিস্থিতিতে এমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এটি প্রমাণ করে, চাইলে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজে সহযোগিতার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্র সমন্বয়কদের ভূমিকাও প্রশংসার দাবি রাখে। তারা চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং বৈষম্যের ইতিহাস বিবেচনায় নিয়ে পদায়ন প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করছেন। এতে শুধু চিকিৎসকরা নন, মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরাও কাজের প্রতি নতুন উদ্যম অনুভব করছেন। স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা শুধু বদলি ও পদোন্নতিতে সীমাবদ্ধ ছিল না; টেন্ডার-বাণিজ্যের সিন্ডিকেটও এ খাতকে দুর্নীতিগ্রস্ত করেছিল। যদিও এই চক্র পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়নি, তবে নতুন প্রশাসনের প্রচেষ্টায় অনিয়ম কমে এসেছে। এ পরিবর্তন প্রমাণ করে, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি এবং কার্যকর নেতৃত্ব অপরিহার্য। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন আর কোনো কাজ নিয়ম ভেঙে করা হচ্ছে না। চিকিৎসকদের পদায়ন ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হচ্ছে। অতীতের মতো দুর্নীতির দাপট আর নেই। এতে চিকিৎসকরা যেমন ন্যায্য সুযোগ পাচ্ছেন, তেমনি সাধারণ জনগণও সঠিক সেবা পাওয়ার আশাবাদী হচ্ছেন। স্বাস্থ্য খাতে স্বচ্ছতার ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সাধারণ মানুষও উপকৃত হবে।
স্বাস্থ্য খাতে ঘুষ ও দুর্নীতির অবসান শুধু এ খাতের নয়, বরং সমগ্র প্রশাসনিক ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। এটি প্রমাণ করে, সঠিক নেতৃত্ব ও সদিচ্ছার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। বর্তমান সরকারের উচিত এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং বাকি সিন্ডিকেট চক্রগুলোকেও সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় করা। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির এই ধারা অব্যাহত থাকলে জনগণের আস্থা বাড়বে এবং দেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে। এই অভূতপূর্ব পরিবর্তন শুধু চিকিৎসকদের জন্যই নয়, বরং সারা দেশের মানুষের জন্য এক নতুন সূচনা। এমন উদ্যোগ মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পথে আরো একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হবে। এক স্বচ্ছ স্বাস্থ্য খাতই হতে পারে উন্নত বাংলাদেশের একটি অন্যতম ভিত্তি।
"