পোলট্রিশিল্প রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি
দেশের পুষ্টি সরবরাহের অন্যতম প্রধান খাত পোলট্রি। পুষ্টির প্রধান উপাদান মাংস এবং ডিম আসে এই খাত থেকে। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এই শিল্প আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। মনে রাখতে হবে, এই শিল্প ধ্বংস হলে দেশের মানুষের পুষ্টি সরবরাহে যেমন ঘাটতি দেখা দেবে, তেমনি বেকার হয়ে পড়বে লাখ লাখ মানুষ। এ ছাড়া সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে এই খাত। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। মুরগি এবং ডিমের প্রধান উৎস প্রান্তিক পোলটি খামারের এক-তৃতীয়াংশ ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে দেউলিয়া হয়ে গেছে অনেক প্রান্তিক খামারি। পরিস্থিতি এমন থাকলে পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাবে সব প্রান্তিক খামার।
বলা বাহুল্য, দেশের মোট মুরগির মাংসের ৯৫ ভাগ ও ডিমের ৮৫ ভাগ আসে এসব প্রান্তিক খামার থেকে। কিন্তু এই শিল্প আজ নানামুখী সংকটের কারণে ক্রমাগত পেছনের দিকে হাঁটছে।
গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সিন্ডিকেটের কারসাজিতে একদিকে মুরগি-ডিমের দাম নিয়ে যেমন ক্রেতার নাভিশ্বাস; অন্যদিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে দেশের পোলট্রিশিল্প। কারসাজির কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের শত শত খামার। প্রান্তিক খামারিদের এভাবে সরিয়ে ফায়দা লুটছে করপোরেট কোম্পানিগুলো। মুরগির খাদ্য-বাচ্চার দাম বাড়িয়ে তারা বছরে লোপাট করছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। ২০২১ সালের শুরুর দিকে আট মাসে পোলট্রি খাদ্যের দাম বাড়ে চার দফা। সেই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে ভ্যাকসিন ও বাচ্চার দাম তিন গুণ ছাড়িয়ে যায়। পোলট্রিশিল্পে জড়িত দেশি-বিদেশি প্রায় ৩০টি কোম্পানি তাদের উৎপাদিত খাদ্য ও বাচ্চার দামে কয়েক বছরে দফায় দফায় বাড়িয়ে লুটে নেয় কোটি কোটি টাকা। করোনা-পরবর্তী সময়ে খামারে শ্রমিকের মজুরি ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় দ্বিগুণ। সব মিলিয়ে গত পাঁচ বছরে প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে বলে তথ্য দিয়েছে পোলট্রি সংগঠনগুলো। অথচ প্রান্তিক খামারিদের ব্যবসা থেকে সরিয়ে করপোরেট কোম্পানিগুলো ফায়দা লুটছে বছর জুড়ে। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) তথ্য বলছে, দেশের পোলট্রি খাতের অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বাড়তি মুনাফার নামে বছরে লোপাট করছে ৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। এ খাতের পোলট্রি খাদ্য, মুরগির বাচ্চা এবং মুরগি বাড়তি দামে বিক্রি করে এ অর্থ লোপাট করছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। পোলট্রি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ খাতের সঙ্গে যুক্ত অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে প্রান্তিক খামারিদের পক্ষে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
ভুলে গেলে চলবে না একজন প্রান্তিক খামারি অর্থ বিনিয়োগ করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পণ্য উৎপাদন করেন। এর পরও তারা নিয়মিত লাভের মুখ দেখেন না। কখনো একবার লাভ হলে আবার পরেরবার লোকসান গুনতে হয়। এই পার্থক্য কমিয়ে খামারি এবং ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষা করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকেই এগিয়ে আসতে হবে।
আমরা কোনোভাবেই চাই না ভোক্তারা দুর্ভোগের শিকার হোক, পুষ্টি সরবরাহে ঘাটতিতে পড়ুক, স্বাবলম্বী থেকে আবারও আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ুক এই খাত। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর পণ্যের উৎপাদন, পাইকারিতে এবং খুচরাপর্যায়ে লাভের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেয়। সেই হার সব ক্ষেত্রে কার্যকর করা হোক কঠোরভাবে। অবিলম্বে এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলেই পোলট্রিশিল্পের বর্তমান সংকট দূর হতে পারে। রক্ষা পেতে পারে সম্ভাবনাময় এই খাত- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"