শিশুদের জন্মসনদ
অভিভাবকদের ভোগান্তি লাঘব হোক
শিশুদের জন্মসনদ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে আছেন অভিভাবকরা। কারণ স্কুলে ভর্তির সময় শিশুর বয়স প্রমাণের জন্য জন্মসনদ চাওয়া হয়। কিন্তু সময়মতো জন্মনিবন্ধন পেতে দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে অভিভাবকদের। শিশুর জন্মনিবন্ধন সনদ তুলতে গিয়ে দেখা যায় তাতে বাবা-মায়ের নাম। আবার বাবার নামে হয়তো মোহাম্মদ আছে, কিন্তু শিশুর জন্মনিবন্ধনে মোহাম্মদ নেই। মায়ের নামে আক্তার থাকলেও শিশুর জন্মনিবন্ধনে মায়ের নামের ঘরে বেগম লিপিবদ্ধ হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে নামের মিল নেই জাতীয় পরিচয়পত্রের। এ ক্ষেত্রে শিশুর জন্মনিবন্ধন করতে প্রথম ধাপে সংশোধন করতে হয় বাবা-মায়ের নাম। মূল ভোগান্তিটা এখান থেকেই শুরু হয়।
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শুরু হয়েছে ভর্তি মৌসুম। রাজধানীর অনেক স্কুলে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকেই নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়ে যায় এবং নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হয়। তবে এই ভর্তিতে চরম বিড়ম্বনার নাম জন্মসনদ। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী, বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় শিশুর বয়স শনাক্ত করতে আবেদন ফরমের সঙ্গে জমা দিতে হয় জন্মসনদের ফটোকপি। অন্যদিকে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে করা সরকারি নিয়মানুযায়ী, ২০০১ সালের পর জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের জন্মনিবন্ধন করাতে হলে মা-বাবার জন্মসনদ থাকাও আবশ্যক। এ কারণে বিদ্যালয়ে ভর্তি ঘিরে প্রতি বছরই সেপ্টেম্বর বা তার আগে থেকেই শিশুর জন্মসনদ সংগ্রহে অভিভাবকদের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। শিক্ষার্থীদের সরকারবিরোধী আন্দোলনের জেরে জুলাইয়ে দেশ জুড়ে জন্মনিবন্ধনের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আন্দোলনের সময় ১৮ থেকে ২৩ জুলাই টানা ৫ দিন মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট-সংযোগ বন্ধ ছিল। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে চলে যান। কার্যালয়গুলোয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হামলা করা হয়। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়। এসব কারণে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের বড় অংশ জুড়ে অনেক জায়গায় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজ বন্ধ থাকে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এসে জন্মনিবন্ধনের আবেদন বাড়তে থাকে। ‘রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন’র তথ্যানুযায়ী, এ বছরের ৬ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে জন্মনিবন্ধনের আবেদনের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩ হাজার ৩৯৮। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তা লাফিয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ হাজার ২৬১টিতে। সর্বশেষ ১০ নভেম্বর জন্মনিবন্ধনের আবেদনের সংখ্যা ছিল ৩৮ হাজার ৫৫। জন্মনিবন্ধন হয়েছে ৩৩ হাজার ৯১৮টি। অন্যদিকে শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় যত এগিয়ে আসছে, ততই ভিড় বাড়ছে নিবন্ধক কার্যালয়গুলোয়। এ ছাড়া অভিভাবকরা জন্মসনদ সংশোধন নিয়ে বাড়তি ব্যয়ের অভিযোগ করছেন। জন্মসনদ সংশোধনের ধার্যকৃত ফি ১০০ টাকা হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০০ টাকাও নিচ্ছেন। পাশাপাশি রয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। তারা আবেদনকারীদের হয়ে তারা কাজ করে দেন। প্রয়োজনে জন্মসনদ তুলে দেওয়া পর্যন্ত তিন থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা তাদের দিতে হয়।
বলা সংগত, স্কুলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য নিজের এবং অভিভাবকের জন্মসনদ আবশ্যক। তা অবশ্যই নিজ নিজ জন্মস্থান থেকে করতে হবে। যাদের ঢাকায় জন্ম অথবা ঢাকায় স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে, সিটি করপোরেশনগুলো থেকে শুধু তাদের দেওয়া হচ্ছে সনদ। তাই ঢাকায় জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্মসনদ করা গেলেও অভিভাবকদের জন্য ছুটতে হচ্ছে তাদের নিজ শহর বা গ্রামে। তবে কয়েক বছর ধরেই প্রক্রিয়াটি বেশ ঝামেলাপূর্ণ। তাতে আবার নতুন নিয়ম যুক্ত হয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক গুণ। আমরা আশা করি, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে। ভোগান্তি লাঘব হবে অভিভাবকের- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"