তালুকদার রিফাত পাশা

  ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

মুক্তমত

সাইকেলবান্ধব নগরী চাই

আমরা প্রতিনিয়ত শব্দ ও বায়ুদূষণ, যানজট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জলবায়ু বিপর্যয় এবং সড়ক দুর্ঘটনা- নানা ধরনের সমস্যা নিয়ে এই মহানগরীতে বসবাস করছি। এসব সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সরকার অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও কষ্টগুলো কিছুতেই আমাদের পিছু ছাড়ছে না। অথচ ঢাকা শহরে বাইসাইকেলের প্রসার দিতে পারে অনেক সমস্যার সমাধান। এটি জাতীয় অর্থনীতিতেও রাখতে পারে অবদান।

ঢাকার মোট বায়ুদূষণের ১০ শতাংশ হচ্ছে যান্ত্রিক যানের মাধ্যমে। অন্যদিকে শব্দদূষণের প্রধান উৎস গাড়ির অতিরিক্ত শব্দ। এ দুটি সমস্যা সমাধানে সাইকেলের চেয়ে ভালো কোনো বিকল্প হতে পারে না। সবার একটি ধারণা হলো, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হলেও এটি থেকে দূরে থাকা যাবে না। কিন্তু বাইসাইকেল হতে পারে একটি টেকসই সমাধান। বাইসাইকেল দেবে গতি ও সাশ্রয়। এক পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকায় চলাচলকারী গাড়ির গড় গতি হচ্ছে ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার। আর সাইকেলের গড় গতি ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার। শুধু তাই নয়, সাইকেল যারা চালায় তারা অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারে। এর ফলে তাদের চিকিৎসাব্যয় অনেক কমে যায়। আর প্রতিদিনের যাতায়াত ভাড়া যে সাশ্রয় হয়, সেটি তো বলার অপেক্ষা রাখে না।

২০১৮ সালের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, সাইকেল চালানোর মাধ্যমে এক ব্যক্তি বছরে ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় করতে পারে। অন্যদিকে সাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ির মাঝে যদি তুলনা করা হয়, তাহলে পরিসংখ্যান বলছে, একটি সাইকেলে প্রতি ১০০ কিলোমিটার চালাতে ৩.০০ ডলার রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ খরচ করতে হয়। আর একটি ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনে সমান পথ অতিক্রম করলে ১৮ ডলার খরচ করতে হয়। প্রতিদিনের যাতায়াতের খরচ সাশ্রয়ের পাশাপাশি একটি বাইসাইকেল হতে পারে আয়ের উৎস। সাইকেল রাখার স্থান ভাড়া দেওয়া, এর খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রি এবং এর মেরামতের মাধ্যমেও অনেক টাকা আয় করা সম্ভব। উন্নত বিশ্বে এ রকম উদাহরণ অনেক আছে।

সাইক্লিং সিটিজ অ্যান্ড আইটিডিপির একটি হিসাব বলছে, এক হাজার যাত্রী বহনকারী গাড়ির জন্য প্রতি কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়। অন্যদিকে বাইসাইকেলের সমানসংখ্যক যাত্রী বহনে প্রতি কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে ১০ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়। দুটি সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেল দুই ব্যক্তির- এ রকম সংবাদ আমরা শুনেছি? না, এ রকম ঘটনা কখনোই ঘটেনি। সুতরাং আমরা যদি এ শহরকে নিরাপদ করতে চাই, তাহলে অবশ্যই সাইকেলের ব্যবহারকে আরো বৃদ্ধি করতে হবে।

বিগত সরকার অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে একটি সাইকেল লেন তৈরি করে। কিন্তু কয়েক দিন না যেতেই এই লেন হয়ে যায় গাড়ি রাখার স্থান। আর বছর বছর এই বাহনটির খুচরা যন্ত্রাংশের ওপর নানা ধরনের শুল্ক আরোপের ফলাফল হলো, এই বাইসাইকেল হয়ে যায় ধনীর বাহন। অথচ সাইকেলের ওপর যে ভ্যাট আরোপ করা আছে, তা প্রত্যাহার করলে এবং এর খুচরা যন্ত্রাংশের ওপর আরোপিত কর হ্রাস করলে আমরা পেতে পারতাম শব্দদূষণ থেকে মুক্তি, বিশুদ্ধ বায়ু, যানজটহীন গতিময় নগর জীবন। আবার সাইকেল চালকদের জন্য লেন তৈরি করলে সেখানে প্রচুর গাছ লাগাতে হতো, পানিপানের ব্যবস্থা করতে হতো, যা সার্বিকভাবে আমাদের পরিবেশের জন্য ইতিবাচক অবদান রাখত। উপরন্তু পথচারীদের জন্য ফুটপাত হয়ে উঠত নিরাপদ।

তাই শুধু দিবস নয়, সাইকেলবান্ধব নগর গড়ে তুলতে প্রতিনিয়ত আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে- আমরা সাইকেলবান্ধব নগরী চাই।

লেখক : পলিসি কর্মকর্তা, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং বাংলাদেশ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close