সুন্দরবনে বনদস্যুদের উৎপাত বন্ধে পদক্ষেপ জরুরি
বাংলাদেশের সুন্দরবন পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য এবং বাঘের বাসস্থান হিসেবে পরিচিত। সুন্দরবনের একসময়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আজ বিপন্ন। সম্প্রতি এই বনাঞ্চলে বনদস্যুদের উৎপাত বেড়েছে, যা শুধু পরিবেশের জন্য নয়, স্থানীয় জনগণের জীবিকা ও নিরাপত্তার জন্যও এক বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বনের উপকূলীয় এলাকা ও নদী অঞ্চলে বনদস্যুদের তৎপরতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
দীর্ঘ স্থিতিশীলতার পর সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে বেড়েছে বনদস্যুদের উৎপাত। এতে ঝুঁকিতে পড়েছেন বনজীবীরা এবং গভীর উদ্বেগে আছেন উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। বনজীবীদের অভিযোগ, দস্যুদের উৎপাত প্রায় কমে গিয়েছিল, সম্প্রতি সাতক্ষীরার পশ্চিম সুন্দরবন এলাকায় আবারও শুরু হয়েছে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনা। মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা জেলেদের ভাষ্য, বনদস্যুরা মৎস্য আহরণে যাওয়া জেলেদের মাছ, টাকা, মোবাইলসহ যা কিছু কাছে আছে সব কেড়ে নিচ্ছে দস্যুরা। চাঁদা না দিয়ে মাছ আহরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব দস্যু বাহিনীর অধিকাংশ সদস্যই সাতক্ষীরা ও কালীগঞ্জের বাসিন্দা। তারা তক্তাখালী, চুনকুড়ি, দারগাংসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে বনজীবীদের ওপর হামলা ও জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছে।
বনদস্যুদের উৎপাত শুধু সাধারণ মানুষের শান্তি নষ্ট করছে না, তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের ফলে সুন্দরবনের পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চোরাশিকার, কাঠ পাচার, মধু সংগ্রহসহ নানা অবৈধ কাজ এই অঞ্চলে চলছে। তাদের হাতে লুটপাট এবং ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংস ঘটনার খবরও মিলেছে। বনদস্যুরা মধু সংগ্রহের নামে বনের গভীরে প্রবেশ করে, যার ফলে বনের নানা জীববৈচিত্র্য ও বনজসম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। এই পরিস্থিতি একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে, অন্যদিকে স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রাও চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া বনদস্যুদের কর্মকাণ্ড স্থানীয় মানুষের জীবিকার ওপরেও বড় প্রভাব ফেলছে। অনেক মানুষ তাদের জীবিকার জন্য সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল, বিশেষত মৎস্য আহরণ, বনায়ন ও বনজসম্পদ সংগ্রহের মাধ্যমে। কিন্তু বনদস্যুদের কারণে এসব কাজের পরিবেশ নিরাপদ নয়, ফলে স্থানীয় মানুষদের জীবিকা হারানোর আশঙ্কা বাড়ছে। পেশাদার মৎস্যজীবীরা বনদস্যুদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে বাধ্য হচ্ছে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। সুন্দরবনে অপহরণের ঘটনা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় বনজীবীসহ সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বনদস্যুদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি অব্যাহত থাকতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সুন্দরবনে অভিযানের মাধ্যমে বনদস্যুদের দমন করার চেষ্টা করা হলেও, তাদের উৎপাত পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। এটি প্রমাণ করে, এখানে শুধু শক্তি প্রয়োগে কাজ হবে না। বনদস্যুদের উৎপাত বন্ধ করতে হলে, তাদের প্রতি কঠোর আইনগত ব্যবস্থা এবং একই সঙ্গে স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি, তাদের বিকল্প জীবনযাত্রার উপায় তৈরি করতে হবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, বনদস্যুদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি, সুন্দরবনকে রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরো নিবিড় মনোযোগ এবং শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী বনাঞ্চল রক্ষায় একটি সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান সম্ভব।
বনদস্যুদের দৌরাত্ম্য বাড়ায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুতই এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সুন্দরবনের পরিবেশ বা স্থানীয় জনগণের জীবিকা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়, এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হতে দেওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে বন বিভাগের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
"