অভিনন্দন ডোনাল্ড ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরো দৃঢ় হোক
রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। সব হিসাবনিকাশ উল্টে দিয়ে গত মঙ্গলবার মার্কিনি জনগণ আরেকবার বেছে নেন সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে। যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই শ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছিল আরেকবার। প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড চার বছর ক্ষমতায় থাকার পর ১৮৮৮ সালে হেরে যান। ঠিক চার বছর পর ১৮৯২ সালে আবার নির্বাচনে জিতে তিনি হোয়াইট হাউসে ফেরেন। ১৩২ বছর পর সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখল যুক্তরাষ্ট্রবাসী। ২০২০ সালে জো বাইডেনের কাছে হেরে হোয়াইট হাউস ছেড়েছিলেন ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তিনি। এই রেকর্ড গড়া জয়ে আমরা তাকে জানাই অভিনন্দন।
বলাবাহুল্য, ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নজর থাকবে বিশ্ববাসীর। একটা হলো, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ কীভাবে থামানো যায় এবং রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক কী দাঁড়ায়। দ্বিতীয় নজর থাকবে ফিলিস্তিনে, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে বলা মুশকিল, সেখানে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসবে কি না। কিন্তু অনেকের আগ্রহ থাকবে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের ব্যাপারে ট্রাম্পের আমেরিকা কী সিদ্ধান্ত নেয়। এ ছাড়া চীনের ব্যাপারেও তার নজর থাকবে। চীন, রাশিয়া ও ভারত মিলে ইতিমধ্যে একটি কাঠামো তৈরি করে ফেলেছে। সেই জায়গায় ট্রাম্পের বাড়তি একটা চেষ্টা থাকবে যেন ভারতকে আরো কাছে টানতে পারেন। আর বাংলাদেশের ব্যাপারে বলা যায়, ইতিমধ্যে রিপাবলিকান পার্টি নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি টুইট করেছেন। যেখানে তিনি সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নানা সম্পর্ক রয়েছে। যেমন : অর্থনৈতিক, কৌশলগত, ভূরাজনৈতিক ইত্যাদি। এ ছাড়া বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ইস্যু যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দেখবে, সেটিও দেখার বিষয়। এর আগে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ব্যাপারে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে গণহত্যা বলা হয়েছিল এবং বার্মা অ্যাক্ট নামে একটি বিলও পাস করা হয়েছিল। আবার তারা রোহিঙ্গা অ্যাক্টও নিয়ে এসেছে। তবে ট্রাম্পের আমলে পরিস্থিতি কী হবে, তা দেখার জন্য আমাদের কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অভিবাসন প্রক্রিয়া। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে অভিবাসনের হার এত কম যে, এ ব্যাপারে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। এ ছাড়া সেটি তেমন গুরুত্বও বহন করে না। তবে আমাদের বিশ্বাস যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৈধ অভিবাসন নিয়ে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেবে। কারণ, এ হার অত্যন্ত কম। বাংলাদেশে এখন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি যেহেতু সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখার কৌশলের বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং বাংলাদেশকে অবস্থান ঠিক রাখতে হলে নিজেদেরই চিন্তাভাবনা করতে হবে।
বলা সংগত, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক শুধু একটি দলের ওপর নির্ভর করে না; বাণিজ্যিক, কৌশলগত, ভূরাজনৈতিকসহ অনেক বিষয় এখানে রয়েছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি কোনো একক ব্যক্তির ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা করে নীতি তৈরি করে দেশটি। তাই আমাদের বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু। এই বন্ধুত্ব বরাবরই অটুট থাকবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"