গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণে নিদর্শন হয়ে থাকুক গণভবন
গণভবনকে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের পঞ্চম বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গত ১৬ বছরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের নিপীড়নের যে স্মৃতিচিহ্ন বাংলাদেশে রয়েছে, সেগুলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। এর পাশাপাশি এই জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে ছাত্র-জনতার বিজয়ের স্মৃতিচিহ্নও। ‘আয়নাঘর’র একটি রেপ্লিকা তৈরির কথাও ভাবা হচ্ছে, সেখানে সংরক্ষণের জন্য। স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের পাশাপাশি গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবেও এই জাদুঘরকে প্রতিষ্ঠা করা হবে। বিগত সরকারের আমলের স্বৈরশাসনের যে ‘আলমত’ রয়েছে, তা সংরক্ষণ করে রাখা প্রয়োজন রয়েছে বলে আমরা মনে করি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলে গণভবনে প্রবেশ করে উল্লাস করে হাজার হাজার জনতা। গণভবনের দেয়াল ও কক্ষে গ্রাফিতি এঁকে এবং খুনি হাসিনাসহ নানা প্রতিবাদ নোট লিখে বিক্ষোভকারীরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে জনগণের স্মৃতিরক্ষার স্থান হিসেবে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে রূপান্তর করার পরিকল্পনা করা হয়। অভ্যুত্থানে শহীদ এবং গুম হওয়া মানুষদের স্মৃতিগুলো এই মিউজিয়ামে সংরক্ষিত থাকবে। অবৈধ ক্ষমতায় থাকার জন্য বাংলাদেশে আর কোনো শাসক যাতে হাসিনার মতো বর্বরোচিত পথ অনুসরণ না করে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই মিউজিয়াম সেই বার্তাই বহন করবে।
এরই মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত শনিবার পরিদর্শন শেষে গণভবনের গেটে এক ব্রিফিংয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এ কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে থাকবেন কিউরেটর, শিক্ষক, লেখক ও ফিল্ম মেকার ড. এবাদুর রহমান। কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলম। কমিটি ঘোষণার পর তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেছেন, ‘গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে যে নিপীড়নের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে, সেগুলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। এর পাশাপাশি এই জাদুঘরে ছাত্র-জনতার বিজয়ের স্মৃতিচিহ্নও সংরক্ষণ করা হবে। জাদুঘরে “আয়নাঘর”র একটি রেপ্লিকা তৈরির কথাও ভাবা হচ্ছে। স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের পাশাপাশি গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবেও এই জাদুঘরকে প্রতিষ্ঠা করা হবে। ছাত্র-জনতার বিজয়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে জনগণ এ জাদুঘরকে ধারণ করবে।’ চলতি সপ্তাহে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের নবগঠিত কমিটি কাজ শুরু করতে পারবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটাতে অনেক প্রাণ গেছে; অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। ছাত্র-জনতার এই বিজয়কে ধারণ করে রাখার উদ্দেশ্যে গণভবনের বর্তমান ভগ্নাবশেষ অক্ষত রেখেই জাদুঘরে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা জনগণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। স্বৈরাচারী সরকারের কী পরিণতি হয়, তা দুনিয়ার মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য গণভবন একটি নিদর্শন হয়ে থাকবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"